সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির পাতে পদ্মার ইলিশ (Hilsa) পড়বে কিনা- তা নিয়ে হাপিত্যেশ করার সময় শেষ। পুজো উপলক্ষে ভারতে এবারও পাঁচ হাজার টনের মতো ইলিশ মাছ রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh) ইলিশ ব্যবসায়ীদের।
ঢাকার বাণিজ্য মন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দফায় ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে মোট ৪ হাজার ৬০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলেও অনেকেই তা করেনি। তবে তার আগের বছর ২০২০ সালে সরকারি অনুমতির কথা মাথায় রেখে প্রথমে ১ হাজার ৪৫০ টন এবং পরে আরও ৪০০ টন ইলিশ রপ্তানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেতে এরই মধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রকে আবেদন করেছে। তা থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতিপত্র দেওয়ার জন্য ঠিক করা হয়েছে।
এবার যেসব প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে, তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে কি না, তা কঠোর নজরদারিতে রাখবে বাংলাদেশ সরকার। উল্লেখ্য, ইলিশের বংশবৃদ্ধি ও বেড়ে ওঠা নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এবারের রপ্তানিকালে ওই নিষেধাজ্ঞার আগে ও পরে অন্তত এক মাস করে মোট দু’মাস সময় দেওয়া উচিত। নইলে অনুমতি নিলেও খুব বেশি রপ্তানি করা যায় না। সময় কম দেওয়া হয় বলে একসঙ্গে সবাই বাজারে যায়। তখন উভয় দেশের বাজারেই ইলিশের দাম অহেতুক বেড়ে যায়।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে দুর্গাপুজো শুরু। সাধারণত দুর্গাপুজো উপলক্ষেই ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০১৯ থেকে দেশটিতে আবার ইলিশ রপ্তানি চালু করা হয়। ‘ভারতে গতবার রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ টন ইলিশ। তখন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকাই ছিল রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা। তবে এবারে রপ্তানি বেশি হবে বলে আশা করা হয়েছে। রপ্তানির সময়সীমা বাড়ানোরও চিন্তা করা হচ্ছে।’
স্থলপথে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে গতবার বাংলাদেশের ইলিশের প্রথম চালানটি কলকাতায় যায়। ভারতে সাধারণত ৭০০ গ্রাম থেকে ১ হাজার ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে ইলিশ পাওয়া যায়। তবে স্বাদের দিক থেকে বাংলাদেশের ইলিশই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
গতবার রপ্তানি ভাল না হওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অসন্তুষ্ট বলে খবর। অনুমতি নিয়েও ভারতে ইলিশ রপ্তানি না করায় গতবার ৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, যারা রপ্তানি করেছিল, তাদের পরিমাণ ছিল ৩ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৪০ টন পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে থাকে। এ জন্য সময় দেওয়া হয় ১৫ দিন। সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দু–এক সপ্তাহের মধ্যেই ইলিশ রপ্তানির অনুমতির কথা আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরকে জানিয়ে দেবে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসে ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুত, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত বছর ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা ছিল। এবারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ৭ অক্টোবর।
রপ্তানিকারকেরা জানাচ্ছেন, পূজা ও নিষেধাজ্ঞা মোটামুটি কাছাকাছি সময়ে পড়ে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা ইলিশ রপ্তানি করতে পারেন না। রপ্তানির জন্য বেশি সময় না পাওয়া এবং সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। এ দু’টিই ভারতে ইলিশ রপ্তানি না হওয়ার অন্যতম কারণ। রপ্তানিকারকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির সময়সীমা গতবার নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। তা থেকে চার-পাঁচ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি হয়। এ কারণে দাম ও সরবরাহে খুব একটা প্রভাব পড়ে না বাজারে। তাতেও ২০০ কোটি টাকার সমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.