সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের একুশে পদক ও ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত ঝর্ণাধারা চৌধুরীর জীবনাবসান৷ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার স্কোয়্যার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অশীতিপর সমাজকর্মী৷ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস-সহ একাধিক বার্ধক্যজনিত রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন ঝর্ণাধারা চৌধুরী৷ গত ২১ জুন তাঁকে ঢাকার স্কোয়্যার হাসপাতালে ভরতি করা হয়৷ এদিন সকাল ৬টা ৩৪নাগাদ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান এই সুবিখ্যাত জনপ্রিয় সমাজকর্মী৷
১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের নোয়াখালির লক্ষ্মীপুরে জন্ম নেন ঝর্ণাধারা৷ কিশোর বয়স থেকেই মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন তিনি৷ পরবর্তী সময়ে গান্ধীবাদকে সঙ্গে নিয়েই সমাজসেবায় নেমেছিলেন৷ তাঁর পরিচয়ই ছিল – ‘গান্ধীবাদী সমাজকর্মী’ বলে৷ ১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নির্দ্বিধায়৷ সেখান থেকে ত্রিপুরায় চলে যান৷ আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে তিনি কাটিয়েছেন বেশ কিছুদিন৷ তারপর নোয়াখালিতে ফিরে শুরু করেন দেশের মানুষের জন্য কাজ৷ ভারত ভাগের আগে এই নোয়াখালিই ছিল সবচেয়ে অশান্ত অঞ্চল৷ সেখানেই শান্তিস্থাপনের লক্ষ্যে প্রথম সফরে যান মহাত্মা গান্ধী৷ তখনই ঝর্ণাধারা তাঁকে দেখেন এবং অনুপ্রাণিত হন৷ জীবনভর অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী ঝর্ণা চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেবা করে বেরিয়েছেন৷ নোয়াখালিতে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষাদানের ব্যবস্থায় তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়৷ অবিবাহিতা ঝর্ণাদেবী ব্যক্তিজীবনেও গান্ধীজির আদর্শ মেনেই চলতেন৷
২০০৩ সালে সমাজসেবার জন্য বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া পদক এবং একই সালে ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় অসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ পান, ২০১০ সালে তিনি ‘গান্ধী সেবা পুরস্কার’ এবং ২০১৫ সালে একুশে পদক পেয়েছেন ঝর্ণাধারা চৌধুরী৷ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক অসুস্থতা কাজের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছিল৷ তবে মনের দিক থেকে বেশ শক্ত ছিলেন৷ শেষবয়সেও নিজেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতেন৷ সকলের ভরসা হয়েই ছিলেন৷ এমন এক মহিয়সীর প্রয়াণে শোকাহত বাংলাদেশের সমাজকর্মীরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.