সুকুমার সরকার, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লি রওনা হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Bangladesh PM Sheikh Hasina)। ঢাকায় বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, দুই পক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। তবে সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে বৃহত্তর সম্পর্কের পুরো ধারাটি আলোচনায় না-ও আসতে পারে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে (New Delhi) অনুষ্ঠিত হবে। নয়াদিল্লিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি আলাপচারিতা করবেন সম্ভবত নিজের বাসভবন, ৭ লোককল্যাণ মার্গে। আন্তরিকতার বার্তা দিতেই এই গৃহ অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় উভয় নেতা নদীদূষণের (River Pollution) মতো সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে এবং অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নত করার জন্য আধিকারিকদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন। নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) সঙ্গে বৈঠকের পর টাকা–রুপিতে লেনদেন সুগম করা, কৃষি খাতে গবেষণা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বিদ্যুৎ ও রেলপথের একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ঢাকার (Dhaka) সূত্র আরও জানিয়েছে, সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় চার বছরের ব্যবধানে শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দেখা হতে চলেছে। এমনকি জি-২০ (G-20 Summit) নৈশভোজের অবকাশে দু’জনের মধ্যে আলাদা করে বৈঠকেরও সম্ভাবনা আছে। আগামী শনিবার রাতে রাজধানী দিল্লির প্রগতি ময়দান কমপ্লেক্সের ‘ভারত মণ্ডপে’ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে দেশি-বিদেশি অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করেছেন, সেখানেই শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ হতে পারে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের যে তীব্র রাজনৈতিক বিরোধ চলছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে যাবেন কিনা – তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। বিশ্বস্ত সূত্রে অবশ্য খবর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যক্তিগত সুসম্পর্কে’র সূত্র ধরে দিল্লিতে জি-২০ সংক্রান্ত বৈঠকের একফাঁকে দু’জনের মধ্যে আলাদা বৈঠক হতে পারে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলোও আরও নিশ্চিত করেছে, দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বৈঠক যদি সম্ভব না-ও হয়, আলাদা করে দু’জন যাতে কথাবার্তা বলতে পারেন, তার সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে শুরু হবে জি-২০ দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন। বাংলাদেশ ওই গোষ্ঠীর সদস্য নয়। কিন্তু ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব পাওয়ার পরই মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশকেই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত, যা দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছনোর দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ওই বৈঠকে যোগাযোগ ব্যবস্থা, তিস্তার জল বণ্টন, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনায় অগ্রাধিকার বিষয় হতে পারে। গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হবে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ”আমাদের কাছে তিস্তার জল বণ্টনের ইস্যু আছে যা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। আমাদের অন্যান্য সমস্যাও আছে। আমাদের দু’দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.