সুকুমার সরকার, ঢাকা: চিনের হুবেই থেকে ইউহান প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া মারণ ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশে। সে দেশের বহু মানুষজন মূলত ব্যবসার কারণে চিনে যাতায়াত করে থাকেন। এই মুহূর্তে চিনের বেশ কয়েকটি প্রদেশে হু হু করে সংক্রমণ বাড়ছে ‘করোনাভাইরাস’-এর। আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের চিনে যাতায়াতের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে প্রশাসন। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের সুপার এবং ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি ইমিগ্রেশন ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সবক’টি দপ্তরে এই বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। পাশাপাশি, চিন থেকে আসা এবং বাংলাদেশ থেকে চিনে ভ্রমণকারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রবেশ এবং প্রস্থানের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোমবার বিশেষ সভা করেছে শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ। ‘করোনাভাইরাস’ কারও শরীরে প্রবেশ করেছে কি না, তা পরীক্ষা করে বোঝার জন্য কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চিনের ইউহান শহরে একটি নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। ভাইরাসটি চিনের পূর্বাঞ্চলের একটি মাছের বাজার থেকে ছড়িয়েছে। জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ভাইরাসটি ভয়াবহ সার্স ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। করোনাভাইরাস ইতিমধ্যেই এক পর্যটকের মাধ্যমে থাইল্যান্ড এবং জাপানে সংক্রমিত হয়েছে। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়াতেও একজনের শরীরে থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ডা. মহম্মদ নাসির আহম্মেদ খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই ভাইরাস জুনোটিক। আর এই ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে- যা থেকে নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর রোগ থেকে মৃত্যুও হতে পারে। চিন থেকে বাংলাদেশে আসা সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর প্রবেশের অনুমতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘ভাইরাসটি যেহেতু চিন থেকে সংক্রমিত হচ্ছে, সেহেতু ওই দেশ থেকে আসা সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভাইরাসটি যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকেও আমরা লক্ষ্য রাখছি।’ দেশের সবকটি নৌ,বিমান ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এবং স্বাস্থ্য ডেস্কগুলিতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এদিকে, চিনে ক্রমশই বাড়ছে করোনাভাইরাসের দাপট। হুবেই, ইউহানের সীমা পেরিয়ে তা বেজিংয়েও ছড়িয়ে পড়ছে। রোগীদের একাধিক পরীক্ষায় বারবারই ধরা পড়ছে নিউমোনিয়া। এর বেশি কোনও চিহ্নই রোগীর শরীরে নেই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে বাসা বাঁধছে মারণ সংক্রমণ। কীভাবে সংক্রমণ হচ্ছে, তা বুঝতে এখনও ব্যর্থ গবেষকরা। মানবশরীর থেকে ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মেলেনি। সামনেই চিনের নববর্ষ। তার আগে করোনাভাইরাস প্রায় মারণ ব্যধির আকার নেওয়ায় দিশেহারা অবস্থা দেশবাসীর। চিনে পাঠরত এবং কর্মরত ভারতীয়দের সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.