বিক্রম রায়, কোচবিহার: রবিবারের সকাল, ঘড়ির কাঁটা তখন আটটা ছুঁইছুঁই। বাংলাদেশের ঢাকা থেকে হুসেন মহম্মদ এরশাদের প্রয়াত হওয়ার খবর দিনহাটায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছাতেই যেন কান্নায় ভেঙে পড়ল গোটা পরিবার। শোকে বিহ্বল দিনহাটার কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। এরশাদ আর দিনহাটায় ফিরবেন না, তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না কেউ। বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেন মহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে তাঁর জন্মভিটেয়।
বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেন মহম্মদ এরশাদ জন্মসূত্রে দিনহাটার বাসিন্দা। এখনও সেখানেই তাঁর খুড়তুতো ভাই ও তাঁর পরিবার বসবাস করেন। দিনহাটা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাড়িতেই ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন হুসেন সাহেব। তারপরেই অবিভক্ত বাংলাদেশের রংপুর জেলার কারমাইকেল কলেজে তিনি পড়তে চলে যান। হুসেন মহম্মদ এরশাদ সাহেবের ভাই মোজাব্বর হুসেন এদিন জানান, যুদ্ধের পর কয়েক বছর কোনও খোঁজখবর ছিল না৷ এরপর ১৯৭৫ সালে হঠাৎ ভারতীয় সেনার একটি চিঠি বাড়িতে এসে পৌঁছেছিল৷ সেখানে লেখা ছিল, হুসেন মহম্মদ এরশাদ বাড়ি ফিরছেন। সেই চিঠির কথা আজও তাঁরা ভুলতে পারেননি৷ কারণ, তাঁরা ভেবেছিলেন যে হুসেন সাহেব ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। যদিও তাঁর বাড়ি ফেরার পর সেই ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়। তিনি দেরাদুনে প্রশিক্ষণে ছিলেন এবং সেখান থেকেই বাড়ি ফিরেছিলেন।
বছর দুই আগে, ২০১৭ সালে দিনহাটায় ফিরেছিলেন এরশাদ সাহেব৷ তারপর আর তাঁর ফেরা হল না। তবে মোজাব্বর হুসেনের পুত্র এহসান হাবিব ও পূত্রবধু সাবিরা সরকার গত এপ্রিল মাসে ঢাকায় গিয়েছিলেন এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁরা জানান, সেখানেই এরশাদ ফের দিনহাটা ফেরার ইচ্ছা জানিয়েছিলেন। তবে তাঁর সেই ইচ্ছে আর পূরণ হল না৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কোচবিহার অঞ্চলে ছিটমহল বিনিময়ে তাঁর অবদান আজও অনস্বীকার্য। ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের অন্যতম নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, এরশাদ ছিটমহলবাসীর দাবি, আন্দোলনকে বারবার উৎসাহিত করেছিলেন। অন্যতম অভিভাবক হিসেবে ছিলেন।
দিনহাটার পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, এরশাদের পথচলা সহজ ছিল না। ১৯৫২ সালের অবিভক্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি মুক্তি পান। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাংলাদেশের মীর ব্রিগেডিয়ার পদ পান। তবে শুধু সেনা আধিকারিক বা রাষ্ট্রপতি নয়। এরশাদ উচ্চমানের একজন খেলোয়াড় ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের ফুটবল জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন। হকি, অ্যাথলিট-সহ বিভিন্ন খেলাধূলায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। রবিবার এরশাদের প্রয়াণের এসব স্মৃতিই এখন সম্বল দিনহাটার পরিবারের সদস্যদের৷
ছবি: দেবাশিস বিশ্বাস৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.