ফাইল ছবি
সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট বানিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গাদের ভোটার কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে একটি মামলাও চলছে হাই কোর্টে। আর এই জাল নথি বানানোর প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে এবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত হলেন এক আধিকারিক। এমনকী, এই ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করার জন্য নাকি কয়েক লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। এইভাবে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ভোটাধিকার পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশি নাগরিকদের।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির রয়েছে। যেখানে মায়ানমারের লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কতজন ভোটাধিকার পেয়েছেন? কয়েকদিন আগে সেই তথ্যই জানতে চেয়েছিল হাই কোর্ট। এই সংক্রান্ত মামলার তদন্ত চলাকালীনই প্রকাশ্যে এসেছে আরেক অভিযোগ। অন্তত ১৫৩ জন রোহিঙ্গার ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট বানানো হয়েছিল। আর এই প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুলচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বলে রাখা ভালো, সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছিল, কক্সবাজার জেলার ইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে অসংখ্য রোহিঙ্গাকে ভোটার কার্ড দিয়ে দেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিচ্ছেন। এনিয়ে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আগামী ৬ জুনের মধ্যে কক্সবাজারের জেলা শাসক-সহ তিন বিবাদীকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি এই মামলার তদন্তে প্রমাণিত রোহিঙ্গাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, ২০১৬ সাল থেকে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে অসংখ্য রোহিঙ্গাকে ভোটার কার্ড দিয়ে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ওইসব রোহিঙ্গাদের জাল ঠিকানা, ভুয়ো পিতা-মাতা সাজিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল। এই ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় এক বাসিন্দা ৩৮ জন রোহিঙ্গার নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়। শেষে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর এক রিপোর্টে ৩৮ জনের মধ্যে ৩৫ জন রোহিঙ্গার বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু তার পরও রোহিঙ্গাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। রোহিঙ্গাদের ভোটার রেখেই ওই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শরিয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে রোহিঙ্গা আসিয়া বিবি (২৭) পাসপোর্ট করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। তার আইডি কার্ড না থাকায় বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু হয়। তার পরজানা যায়, ১৫৩ রোহিঙ্গার বার্থ সার্টিফিকেট কয়েক লাখ টাকার লেনদেনে হয়েছে। এতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস ও ডিজিটাল সেন্টারের আধিকারিক নয়ন গুপ্ত-সহ আরও কয়েকজন ব্যক্তিরা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.