সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রকাশ হওয়া ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ বইটি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। স্বভাবত শাসকদল আওয়ামি লিগের বিরোধী বিএনপি বইটিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামনে রেখে তুরুপের তাস হিসেবে বেছে নিয়েছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত প্রধান বিচারপতি ছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপোড়নের মধ্যেই ৪ মাসের ছুটিতে গত বছরের ১৪ অক্টোবর দেশ ছাড়েন তিনি। পরে বিদেশ থেকেই রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান এসকে সিনহা। সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, নৈতিক স্খলন-সহ ১১টি অভিযোগ রয়েছে। যে অভিযোগগুলো করেছে স্বয়ং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। দেশ ছাড়ার প্রায় এক বছর পর নির্বাচনের আগে হঠাৎ আলোচনায় আসেন এসকে সিনহা। বইতে দেশত্যাগের কারণ, পদত্যাগ এবং সরকারের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি তুলে ধরে এখন দৃশ্যপটে সিনহা। বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধানও করছে দুদক।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এই বইতে তার পদত্যাগ থেকে শুরু করে দেশত্যাগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যা যা ঘটেছিল তা তুলে ধরেছেন। তাঁর এ বই নিয়ে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক হওয়ার অন্তর্জ্বালা থেকেই বিদেশে বসে মনগড়া বই লিখেছেন এসকে সিনহা। ভূতুড়ে কথা তুলে ধরেছেন। এর কোনও যৌক্তিকতা নেই। যদি সত্যই বলতেন তাহলে যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন কেন এসব বলেননি? আর তিন দেশে ফিরে তিনি জনগণের কাছে বললেন না কেন? সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সিনহা সাবেক। কী পরিস্থিতিতে সাবেক হয়েছেন তা সবাই জানে। ক্ষমতা যখন থাকে না তখন অনেক অন্তর্জ্বালা-বেদনা হয়। বই লিখে মনগড়া কথা বলবেন বিদেশে বসে, এটা নিয়ে অত নাক গলানোর কোনও প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।’ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার মাধ্যমে যারা জুডিশিয়াল ক্যু করতে চেয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখন পরাজিত সেই শক্তি মাথা চাড়া দিতে চাইছে। আর এস কে সিনহার বই হচ্ছে একজন পরাজিত ব্যক্তির হা-হুতাশ। শুক্রবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
[ইন্দো-বাংলা সহযোগিতায় দক্ষিণ এশিয়া সমৃদ্ধ হবে: হাসিনা]
এদিকে বিচার বিভাগের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার লেখাকে এখন সেই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে দেখাচ্ছেন দলের নেতারা। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সিনহার কথায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রমাণ করে না। প্রমাণ করে সরকার ও তার অন্যান্য বিভাগ বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার আত্মজীবনীমূলক বইতে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি যেন সরকারের পক্ষে যায়, সেজন্যে তার তার ওপর সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল। এই বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সিনহা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.