Advertisement
Advertisement
Durga Puja in Bangladesh

Durga Puja in Bangladesh: বনের বিগ্রহ দিয়েই শুরু হয় যশোরের মহারাজার দুর্গাপুজো, নেপথ্যে ঐতিহাসিক এক কাহিনি

এই দুর্গাপুজোর শিকড় এখনও রয়েছে ভারতে।  

Durga Puja in Bangladesh: There is a historic story behind Jashore's Durga Puja in Bangladesh। Sangbad Pratidin
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:October 17, 2023 4:12 pm
  • Updated:October 17, 2023 4:32 pm  

সুকুমার সরকার, ঢাকা: ধন্য-ধান্যে ভরপুর বাংলাদেশের যশোরের দুর্গোৎসব(Durga Puja in Bangladesh) অতি প্রাচীন। শতকের পর শতক ধরে মহাসমারোহে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে ওপার বাংলার এই জেলায়। নাম করা এই মাতৃবন্দনার নেপথ্যে রয়েছে প্রাচীন এক কাহিনি। বনের মধ্যে আলোর বিচ্ছুরণ দেখে নাকি খুঁজে পাওয়া যায় বিগ্রহ। তার পরই যশোরে শুরু হয় মহারাজা প্রতাপাদিত্যের বিখ্যাত এই দুর্গাপুজো। যার শিকড় এখনও রয়েছে ভারতে।  

শোনা যায়, যশোরের (Jashore) পৃষ্ঠপোষক দেবতা ছিলেন যশোরেশ্বরী। ষষ্ঠদশ শতকের এক সকালে যশোরের রাজপরিবারের এক সদস্য কাছাকাছি একটি বন থেকে আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পান। এই খবর রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের কানে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে আলোর উৎস অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। একজন মন্ত্রী জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে মা কালীর একটি বিগ্রহ খুঁজে পেয়েছিলেন এবং সেখান থেকে আলো বের হচ্ছিল। প্রতাপাদিত্য উপলব্ধি করেছিলেন যে, এটি পৃষ্ঠপোষক দেবতার বিগ্রহ, যা তাঁর রাজ্য ও তাঁর জনগণের রক্ষাকর্তা। তাই তিনি বিগ্রহটি তাঁর রাজ দরবারে নিয়ে এসে একটি মন্দির নির্মাণ করেন এবং সবাইকে উপাসনা করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে প্রতাপাদিত্যের দেওয়ান বাড়ির মন্দিরে শুরু হয় দুর্গাপুজো। সেই রাজ দরবার, পাইক-পেয়াদা সব আজ কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে। তবে মহারাজা প্রতাপাদিত্যের হাত ধরে শুরু হওয়া দুর্গোপুজো ঘিরে আজও এলাকার মানুষজন মেতে ওঠেন। মহারাজা প্রতাপাদিত্যের ভেঙ্গে পড়া দালানকোঠার জায়গায় নির্মিত হয়েছে নতুন ভবন। গত ১০ বছর ধরে সেখানে ধর্মচর্চা করছেন ইসকনের সেবাইতরা। তাঁরাই দুর্গাপুজোর দায়িত্ব পালন করছেন।   

Advertisement

[আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা নেতা খুনে গ্রেপ্তার আরসার কিলার প্রধান নুর কামাল, উদ্ধার দেশি-বিদেশি অস্ত্র]

মহারাজা প্রতাপাদিত্য রায় (১৫৬১–১৬১১ খ্রি) বাংলাদেশের (Bangladesh) যশোহর সাম্রাজ্যের নৃপতি, যিনি তৎকালীন মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম এক স্বাধীন সাম্রাজ্যের নৃপতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। মুঘল শাসনাধীন ভারতে প্রথম স্বাধীন ‘স্বরাজ’-এর আদর্শ স্থাপন করেন এই বাঙ্গালী সম্রাট । ষোড়শ শতকের সূচনায় যখন সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে বিস্তার হতে থাকে মুঘল সাম্রাজ্য, সেই সময় পূর্ব ভারতে স্বতন্ত্র সনাতনী শাসনের আলো জ্বেলে রেখেছিল বাংলার ৮টি স্বাধীন হিন্দুরাজ্য। এই রাজ্যসমূহের মধ্যে তৎকালীন যশোর রাজ্যের মহারাজাধিরাজ প্রতাপাদিত্যের নেতৃত্বে হিন্দুর ক্ষমতা ক্রমশ অন্য রূপ নেয়। মুঘল সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়ে সমগ্র বৃহৎ বঙ্গে শাসন বিস্তার করে তিনি নির্মাণ করেন অখণ্ড সনাতনী যশোর সাম্রাজ্য । তাঁর অখণ্ড যশোর সাম্রাজ্য কেন্দ্রে ধূমঘাট থেকে শুরু করে পশ্চিমে বিহারের পাটনা, দক্ষিণে উড়িষ্যার পুরী ও পূর্বে চট্টগ্রামের কাছে সন্দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রতাপাদিত্য তাঁর পিতার মৃত্যুর পরে যশোরের সকল সম্পদের একমাত্র উত্তরসূরী হয়েছিলেন। সুন্দরবনের সঙ্গে প্রতাপের ছিল নিবিড় সম্পর্ক।   

১৫৭৬ সাল, দিল্লির (Delhi) মসনদে তখন মোঘল সম্রাট আকবর। মাথায় তার রাজ্য বিস্তারের নেশা-ধ্যান-ধারণা। তাই তার মোঘল সেনারা চারদিকে দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে রাজ্যজয়ের নেশায়। ভয়ে ছোট ছোট রাজারা বশ্যতা স্বীকার করে নিচ্ছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম যশোরের স্বাধীন রাজা প্রতাপাদিত্য। এই খবর শুনে চটে লাল দিল্লির বাদশাহ। তলব করলেন সেনাপতি মানসিংহকে। আদেশ দিলেন যশোর দখল করে জীবিত বা মৃত যেভাবেই হোক প্রতাপাদিত্যকে ধরে আনতে হবে। গুপ্তচর মারফত এমন খবর পেয়ে চিন্তায় পড়লেন প্রতাপাদিত্য। কেন না যুদ্ধ শুরু হলে তার নাবালক পুত্রের দায়িত্ব কে নেবে? রাজার এই চিন্তার কথা জানতে পেরে দেওয়ান দুর্গারাম চৌধুরী নাবালক ছেলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানালেন। এরই মধ্যে মানসিংহ বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে যশোর আক্রমণ করলেন। দুর্গারাম রাজার ছেলেকে নিয়ে লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন নদীয়ার ধোড়াদহ গ্রামে। চারিদিকে জল আর ঘন বনজঙ্গলের মধ্যে নাবালক ছেলেকে নিয়ে থাকতে লাগলেন। যুদ্ধ শেষ হয়েছে শুনে দেওয়ান দুর্গারাম রাজাকে খবর দিলেন তার ছেলে ভালো আছে। ছেলের প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্রতাপাদিত্য অত্যন্ত খুশি হয়ে দুর্গারামকে পাঁচটি মহল দান করেন। পাঁচ মহলের একটি মহলের নাম ধোড়াদহ।

[আরও পড়ুন: ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে ব্যতিক্রমী পারিবারিক দুর্গাপুজো বাংলাদেশের বাগেরহাটে]

দেওয়ান থেকে জমিদার হয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন দুর্গারাম। কেন না, জঙ্গলে আত্মগোপন করার সময় মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন সন্তানকে রক্ষা করে নিরাপদে যেন রাজার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। ধোড়াদহের ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করে খড়ের চালা নির্মাণ ঘরে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। পরে ১৭৫৩ সালে পাকা দালান করে সেখানে জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো শুরু হয়। রীতি মেনে সেই পুজো আজও চলে আসছে। অপরদিকে খাগারঘাট (ধুনা যশোর) যুদ্ধে পরাজিত হলে প্রতাপাদিত্যর সেনাপতি শঙ্কর বন্দি হন। পরে তিনি ছাড়া পেয়ে বারাসাতে নিজের আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান এবং সেখানে তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন। এদিকে প্রতাপাদিত্যের কনিষ্ঠ পুত্র রাজীবলোচন যশোর থেকে বিষ্ণুপুরে চলে যান। সেখানে তার পুত্র রাজধর মল্লরাজ বীর হাম্বিরের দেওয়ান হন। সঙ্গে নিয়ে আসা দেবী দশভুজার বিগ্রহ স্থাপন করে বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জে একটি মন্দির তৈরি করে সেখানেও দুর্গাপুজো শুরু হয়। এছাড়া বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড়ের রায় পরিবার যাঁরা তাঁর বংশধর, তাঁরা আজও দুর্গাপুজোয় দেবীর মুখমণ্ডলের পুজো করে থাকেন।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement