Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2024

আসছে শারদোৎসব, সেজে উঠছে বাংলাদেশের একমাত্র লালবর্ণ দুর্গা

মৌলভীবাজারের রাজনগরে ৩০০ বছর ধরে পূজিতা হন লাল রঙের প্রতিমা।

Durga Puja 2024: Red Durga idol decorated during Durga Puja in Bangladesh
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 7, 2024 5:03 pm
  • Updated:October 7, 2024 5:54 pm  

সুকুমার সরকার, ঢাকা: সোনার বরণ দুর্গা আবার লাল! হ্যাঁ, এমনই ব্যতিক্রমী চিত্র বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের রাজনগরে। এখানে ৩০০ বছর ধরে পূজিতা হচ্ছেন লালবর্ণের দুর্গা। এবছরও দুর্গোৎসবের(Durga Puja 2024) আগে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে রক্তবর্ণ দশভুজাকে। গোটা দেশে আর কোথাও এমন লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পুজো নেই বলেই জানা গিয়েছে। প্রতি বছর ষষ্ঠী থেকে দশমীর বিসর্জনের দিন পর্যন্ত পাঁচদিন ধরে দেবী দর্শনে লক্ষাধিক ভক্তের ঢল নামে রাজনগরে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে নিভৃত গ্রামটি।

লাল দুর্গার নেপথ্য কাহিনিও ভারী আকর্ষণীয়। সে তিনশো বছর আগেকার কথা। সর্বানন্দ দাস তৎকালীন সরকারের অধীনে মুন্সি পদবির সমান ছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল অসমের শিবসাগর জেলায়। কামাখ্যাধামে তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন। মহাষ্টমীর দিনে পঞ্চমবর্ষীয় এক কুমারীকে পুজো দেব। প্রায় ৬ ঘণ্টা পুজো শেষে ভগবতীকে প্রণাম করার পর সর্বানন্দ দাস অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন। তিনি দেখতে পান, কুমারীর গাত্রবর্ণ বদলে গিয়েছে লালে। তিনি কুমারীকে জিজ্ঞাসা করেন, ”মা, আমার পুজোয় সুপ্রসন্ন হয়েছো?” উত্তরে ভগবতী বলেন “হ্যাঁ, তোর পুজো সিদ্ধ হইয়াছে। এখন হইতে তুই ভগবতীকে লালবর্ণে পুজো করবি। কুমারী দেবী বলেন তোর দুর্গামণ্ডপে বেড়ার উপরে আমার হাতের চাপ রেখে এসেছি। তোর পুজোয় আমি সন্তুষ্ট। তুই আমার কাছে বর প্রার্থনা কর।”

Advertisement
মৌলভীবাজারে রাজনগরে ৩০০ বছর ধরে পূজিতা হচ্ছে লাল দুর্গা। নিজস্ব চিত্র।

সর্বানন্দ বলেন, ”আমার স্থাপিত পাঁচগাঁওয়ের দুর্গামণ্ডপে স্থায়ীভাবে অধিষ্ঠিত থাকবে। প্রত্যুত্তরে ভগবতী ‘তথাস্তু’ বলেই মাথায় পরিহিত সোনার সিঁথি খুলে সর্বানন্দের হাতে দেন। পরবর্তীতে নিজের বাড়িতে সর্বানন্দ মাতৃ মূর্তিকে কুমারীর গায়ের সেই লাল বর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে দেবীবন্দনা শুরু করেন। কিন্তু এমন বর্ণের পুজোর আয়োজন দেখে বাধ সাধেন গ্রামবাসীরা। ওই বছর ষষ্ঠীর দিন কেউ আর পুজো যাননি। পুরোহিতের অভাবে দেবীবোধন সম্পন্ন হয়নি। সর্বানন্দ পাগলের মতো মাকে ডাকতে লাগলেন। ভোরের দিকে পুরোহিত, জ্ঞাতি ও গ্রামবাসীরা পুজো মণ্ডপে গিয়ে জানান, ভগবতী এই লালবর্ণে পূজিতা হবেন বলে সবাই স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন। শুরু হয় মহাসপ্তমী পুজো। এর পর থেকে লালবর্ণের দুর্গাই পূজিতা হয়ে আসছে।

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পাঁচগাঁও গ্রাম। দুর্গাপুজো মণ্ডপ ঘিরে আশেপাশের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এখন মেলা বসে। কয়েকশত দোকানে বেচাকেনা হয়- খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলিপি, মিষ্টি, বাঁশি, বেলুন, ঝুমঝুমি। এখানে আগত হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা তাদের নানা মানত নিয়ে ছুটে আসেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি জ্বালান। কেউবা পশু বলি দেন। এখানে দুর্গামণ্ডপে নাট মন্দির, যজ্ঞ মন্দির, যাত্রী নিবাস, ভোগ মন্দির, ফুল নৈবেদ্য রাখার ঘর, শিবমন্দির এবং পাকা ঘাট-সহ পুকুর রয়েছে। পুজো উদযাপন কমিটির পরিচালক সঞ্জয় দাস জানান, মূলতঃ এটি পারিবারিক পুজো। পুজো পরিচালনাকারীদের মধ্যে তিনি এখন ষষ্ঠ পুরুষ। তার পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস ধ্যানে বসে কুমারী পুজোর মাধ্যমে লাল দুর্গার দর্শন পাওয়ার পর তিনশো বছর ধরে এখানে লাল বর্ণের দুর্গার পুজো হয়ে আসছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement