সুকুমার সরকার, ঢাকা: গত ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশের (Bangladesh) দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বাগেরহাটের দুর্গাপুজো (Durga Puja) ব্যতিক্রমী তকমা পেয়েছে। বাগেরহাট সদর উপজেলার বণিকপাড়ায় এবার ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপুজো ঘিরে বাগেরহাট-সহ আশপাশের এলাকায় আকর্ষণের অন্ত নেই। প্রতিমার পাশে রয়েছে ৬৫ ফুট উঁচু ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণ। পারিবারিকভাবে দুর্গাপুজোর এই বিশাল আয়োজনকে ঘিরে মন্দির প্রাঙ্গণে চলছে সাজ সাজ রব। শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও আয়োজকরা।
বাগেরহাটের চুলকাঠি বণিকপাড়া দুর্গামণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করতেই দর্শনার্থীদের চোখে পড়বে রাস্তার ধারে দেবদেবীর সারি। সর্বশেষে মূল মণ্ডপে রয়েছে দুর্গা ও তাঁর সহযোগী দেবদেবীর মূর্তি। গত ছ মাস ধরে ৪৫ জন কারিগর রামায়ণ (Ramayan) ও মহাভারতের (Mahabharat) ৪ যুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে এই প্রতিমা তৈরি করেছেন। সবমিলিয়ে এখানে ৫০১টি প্রতিমার একেকটিকে কারিগরগণ তাদের নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য।
চুলকাঠি বণিকপাড়ায় পারিবারিক বিশাল যজ্ঞের দুর্গাপুজো মণ্ডপের নাম মুখে মুখে দূরদূরান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে। পুজো শুরু না হলেও, এখন থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এই বিশাল আয়োজন দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন। শিক্ষার্থী কল্পনা দত্ত বলেন, ”দুর্গাপুজোর এত বড় আয়োজনে আমরা কোথাও কখনো দেখা দূরের কথা শুনিনিও। খুব ভালো লাগছে, আমাদের এলাকায় এমন ধরনের আয়োজন দেখে।” লীলারানী নামের স্থানীয় এক গৃহবধূর কথায়, ”শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, আমাদের এলাকার অনেক মুসলিমরাও (Muslim)এত বড় আয়োজনের এই পুজো দেখতে আসেন। আমরা মিলেমিশে আনন্দ-উৎসবে শামিল হই। কয়েক বছর ধরে মিলেমিশে একসঙ্গে দুর্গোৎসব উপভোগ করছি।”
প্রতিমার তৈরির কারিগর বিজয়কৃষ্ণ বাছারের বক্তব্য, ”৫০১টি প্রতিমার মাধ্যমে আমরা রামায়ণ ও মহাভারতের চার যুগের দেবদেবীর নানা কাহিনি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আশা করি, দর্শনার্থী ও ভক্তদের ভালো লাগবে।” বণিকপাড়া দুর্গা মন্দিরের অসীম শিকদার, শিশির শিকদার, লিটন শিকদাররা বলছেন, ”১৯১০ সালে তাঁর বাবা স্বর্গীয় দুলালকৃষ্ণ শিকদার ৮০১টি প্রতিমা গড়ে দুর্গোপুজোর আয়োজন করেন। করোনার কারণে ২০, ২১ ও ২২ সালে ১০১টি প্রতিমা তিন বছর দুর্গাপুজো করা হয়। এবার শিকদার পরিবার ৫০১টি প্রতিমা গড়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছেন। সম্ভবতঃ বাংলাদেশের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় আয়োজনের দুর্গোপুজো।”
এদিকে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে দুর্গাপুজো উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য কাজ করছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি মণ্ডপে আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এর পাশাপাশি মণ্ডপ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকও থাকার কথা রয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে স্থাপন করা হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্যের কথায়, ”প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে বিসর্জন অর্থাৎ দশমী (২৪ অক্টোবর)পর্যন্ত আমরা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আশা করি, সবাই মিলে উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গাপুজো উদযাপন করতে পারবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.