সুকুমার সরকার, ঢাকা: শারদোৎসবে মেতে উঠেছে ওপার বাংলাও। এবছর বাংলাদেশের (Bangladesh) দুর্গাপুজোগুলিতেও বেশ কিছু বিশেষত্ব লক্ষ্য করা গিয়েছে। রাজধানী ঢাকার (Dhaka) রমনা কালীমন্দিরের দুর্গাপুজোর দায়িত্বে এবার পুরোপুরি নারীবাহিনী। প্রথমবারের মতো দেশের অন্যতম এই বৃহৎ মন্দিরের দুর্গাপুজোর ভার নিয়েছেন মহিলারা। এই বিশেষত্বের এক প্রতীকী উপস্থাপন ছায়ামূর্তি।
অন্তত চারশ বছরের পুরনো রমনার কালীমন্দিরের দুর্গাপুজো (Durga Puja)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পাশেই এই মন্দির। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাকিস্তানি দখলদাররা কামান দেগে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল মন্দিরের একাংশ। সেখানকার ঠাকুর, সেবাইত-সহ শতাধিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর থেকে ফের ঘটা করে প্রতি বছর দুর্গাপুজো হয়ে আসছে এখানে। তবে কখও পুজোর মূল দায়িত্বে নারীরা ছিলেন, এমনটা হয়নি বলেই জানালেন মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা।
রমনা কালীমন্দির দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের দায়িত্ব পাওয়া সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা সিকদার জানালেন, ‘‘দেবী দুর্গার নানা রূপ। কখনো তিনি কালী, কখনো মাতৃস্বরূপা। তিনি নারী শক্তির প্রতীক। প্রত্যেক নারীর মধ্যে এই শক্তির সঞ্চয় আছে। অন্তর্নিহিত এ শক্তি তুলে ধরতেই ছায়ার এ আদল।’’ মন্দির প্রাঙ্গণে দেবীমূর্তি সাজানো হয়েছে নানাভাবে। নীলচে মরিচবাতির ঝালর পড়ছে মন্দিরের নানা প্রান্তে। পুজোর নানা কাজ সামলাতে গলদঘর্ম পুজো কমিটির আহ্বায়ক চৈতীরানি বিশ্বাস। তাঁর মুঠোফোনে বারবার ফোন আসছে। এটা-ওটা নির্দেশ দিচ্ছেন। চৈতী জানান, সারাদিন ছুটেছেন রাজধানীর নানা প্রান্তে, নিমন্ত্রণ জানাতে।
এবার নারীদের দায়িত্বে রেখে পুজো প্রসঙ্গে চৈতী বলেন, ”পুজো আয়োজন নারীদের চিরাচরিত দায়িত্ব ফুল তোলা, প্রসাদ তৈরি, নাড়ু বানানো – এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কেন তাঁরা দায়িত্ব নিতে পারবেন না? নারীশক্তির আরাধনার দায়িত্ব তাই এবার আমরা নিলাম।” এবার এ মন্দিরে নারীর অংশগ্রহণ ঘটেছে নানা পর্বে। যেমন মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠের কাজ সাধারণত পুরুষেরাই করেন। এবার এ মন্দিরে এসে চণ্ডীপাঠ করেছেন চট্টগ্রামের শঙ্কর মঠের নমিতা চক্রবর্তী। চৈতী বিশ্বাস বলেন, ”নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতীক এটি। এ সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে গেছে তাঁদের এই যূথবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমরা সে কথাই বলতে চেয়েছি।”
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, পুজোমণ্ডপে প্রতিমার কাছে এবার নারীরাই থাকবেন। শুধু মন্দিরে নয়, এবার নারী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সামলাবে মন্দিরের শৃঙ্খলার কাজ। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিমাদর্শন থেকে অন্যান্য সহায়তার জন্য নারীদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর করোনাকালে (Coronavirus) মন্দিরে কাউকেই মাস্ক ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না। ফটকে থাকবে স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা। এসবের ব্যবস্থাপনায় থাকছেন নারীরাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত-মৈত্রী হলের ছাত্রী সুস্মিতা দে জানালেন, ”ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সয়লগ্ন এ মন্দিরের পুজো কমিটিতে নারীরা আগেও ছিলেন। কিন্তু প্রধান দুই পদে এই প্রথম নারী। জাতীয় পর্যায়ের এ মন্দিরে নারীদের অংশগ্রহণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.