সুকুমার সরকার, ঢাকা: দু’দেশের কূটনীতিকদের ভিসা স্থগিত নিয়ে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক লড়াই চলছে। এই বিরোধের আগুনে প্রথমে ঘি ঢালে পাকিস্তান। বসে থাকেনি ঢাকাও। জবাবে পালটা ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ। চার মাস ধরে পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (প্রেস) ইকবাল হোসেনের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন স্থগিত রাখার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানিদের ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতিবাদে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে হাইকমিশন। বাংলাদেশ দূতাবাসের ওই আধিকারিক বলেন, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন ইকবাল। দু’দিন পর নথিটি সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পৌঁছায়। গত বছরের নভেম্বর থেকে দূতাবাসে ভিসা অফিসার পদটি খালি রয়েছে। ইকবাল তাঁর বর্তমান দায়িত্বের সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে সে বিভাগের দায়িত্বও পালন করছেন। ইসলামাবাদ হাইকমিশনের আধিকারিক বলেন, ‘প্রতিবাদ হিসেবে গত এক সপ্তাহ ধরে ইকবাল হোসেন পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছেন। এটা কোনও সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে বন্ধ নয়।’
ইসলামাবাদে ইকবালের সঙ্গে তাঁর মেয়ে রয়েছেন। ভিসা না পাওয়ায় তাঁর স্ত্রী ও ছেলে ঢাকায় আছেন। অপর এক কূটনৈতিক সূত্রে খবর, ভিসা নেওয়ার জন্য ইকবালের স্ত্রী ও ছেলেকে পাকিস্তান হাইকমিশনে ডেকে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করিয়ে তাঁদের পরে আসতে বলা হয়। তিনবার তাঁদের সঙ্গে একই আচরণ করা হয়। এদিকে, গত ৩০ মার্চ ইকবালের ভিসা মেয়াদ শেষ হয়। এরপর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে বলে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কয়েকটি বৈঠক এবং চিঠি চালাচালি হলেও সুরাহা হয়নি।
অপরদিকে, গত বছরের মার্চে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক বাংলাদেশে তাদের নতুন হাইকমিশনার হিসেবে সাকলিন সায়েদাহর নাম প্রস্তাব করে৷ বাংলাদেশ তা বাতিল করেনি, গ্রহণও করেনি। অর্থাৎ বাংলাদেশি আধিকারিকের ভিসার মেয়াদ না বাড়ানোর প্রতিবাদে পাকিস্তানিদের ভিসা বন্ধ করে বাংলাদেশ। গত বছরের ৬ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভিসা কাউন্সেলর দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফেরেন। নতুন কর্মকর্তা যোগ না দেওয়ায় ২০১৮-র নভেম্বর থেকেই ইকবাল হোসেন প্রেস কাউন্সেলরের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত ভিসা কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এ বছরের ৩০ মার্চ ঢাকায় ফেরার কথা ছিল তাঁর।
ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিজের ও মেয়ের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে গত ৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রেস কাউন্সেলর। অন্যদিকে, পাকিস্তানি বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ১ বছর পেরিয়ে গেলেও পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার সাকলায়েন সায়েদার মনোনয়ন বাংলাদেশ অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান কিছুই করেনি৷ ২০১৮-র মার্চ থেকে এই পদটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে৷ ঢাকায় পাক দূতাবাস থেকে বাংলাদেশের ভিতরে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে, ঢাকা এই অভিযোগে সরব হওয়ার পরই দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে শিথিলতা রয়েছে৷ এমনকী, গত ৪ বছর ধরে দু’দেশের মধ্যে বিদেশসচিব পর্যায়ের কোনও বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.