সুকুমার সরকার, ঢাকা: ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞানের বইতে পড়া হয়েছিল পতঙ্গভুক গাছের কথা। বইয়ের পাতায় দেখা সেই ছবিই এবার উঠে এল বাস্তবে। বাংলাদেশের শ্রীহট্টে দেখা মিলল পতঙ্গভুক উদ্ভিদ – সূর্যশিশিরের। ছোট ছোট কীটপতঙ্গই এর বেঁচে থাকার রসদ। তবে সূর্যশিশির নিজেও আজ বিপন্ন। একে বাঁচাতে তাই নতুন করে গবেষণার পথে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের একাংশ।
শিশু, ফুল আর সঙ্গীত – চিরাচরিতভাবে পৃথিবীর এই তিনটি জিনিস মানেই সুন্দর। সে ফুলের নাম যদি হয় ‘সূর্যশিশির’, তাহলে তার প্রেমে না পড়ে উপায় নেই। কিন্তু তাতেই মুশকিল। পৃথিবীর আর পাঁচটা ফুলের মতো সুন্দর ভাবলে মহাভুল করবেন। আপনার মনোরঞ্জনের জন্য এ ফুলের জন্ম হয়নি। বরং বাস্তুতন্ত্রের অমোঘ নিয়মে এ নিজেই জীবজগতের আরেকটি অংশ ভক্ষণ করে বেঁচে থাকে। এ ফুলটি একেবারে ভিন্নতর। এটি মাংসাশী ফুল। অর্থাৎ কীট-পতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। বন্যপ্রাণী গবেষক ও সংরক্ষক তানিয়া খানের মতে, এই ফুলের বাংলা নাম ‘সূর্যশিশির’। বৈজ্ঞানিক মহলে ড্রসেরা নামে অধিক পরিচিত। বাংলাদেশে একমাত্র পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ হিসেবে ড্রসেরাই দেখা যায়। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘একমাত্র সিলেট এলাকার কয়েকটি অঞ্চলে দেখা গিয়েছিল এই ফুল। তিন বছর আগে মৌলভী বাজারের একটি বনে খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর এবার ফের আরেকটি জঙ্গলে দেখা মিলল। সাধারণত বর্ষার মরসুমে এদের খুঁজে পাওয়া যায়। অপেক্ষাকৃত কর্দমাক্ত জায়গায় বেশি জন্মায় সূর্যশিশির।’ ফুলটির চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই গবেষক জানিয়েছেন, ‘ফুলের মাথায় তীব্র আঠা থাকে। কোনও কীটপতঙ্গ যখন তার রূপের আকর্ষণে ওই ফুলের উপর বসে, তখনই তীব্র আঠায় আটকা পড়ে যায়।’
সরকার চকবাজার ট্র্যাজেডির দায় এড়াতে পারে না, মন্তব্য হাসিনার মন্ত্রীর
কিন্তু এই মুহূর্তে পতঙ্গভুক এই উদ্ভিদটি নিয়ে মহা চিন্তায় গবেষক মহল। ড্রসেরা বা সূর্ষশিশির বর্তমানে বিপন্ন। উপযুক্ত পরিবেশের অভাব, দেশের বনাঞ্চল সাফ করে নগরায়নের দৌড় – এসবের কারণেই তাদের অস্তিত্ব মারাত্মক বিপদের মুখে। এদের বিলুপ্তি থেকে বাঁচাতে নতুন করে গবেষণা শুরু হয়েছে বন্যপ্রাণ সংরক্ষক মহলে। গবেষক তানিয়া খান কয়েকটি সূর্যশিশির সংগ্রহ করে নিজের ল্যাবরেটিতে নিয়ে গিয়েছেন। তারা কতদিন থাকে, কীভাবে থাকে – এসব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি বুঝতে চাইছেন, সূর্যশিশিরের প্রকৃত আয়ু আর কতদিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.