Advertisement
Advertisement

Breaking News

ফিরে এলে ‘ধানসিড়ি’ নদীটি খুঁজেই পেতেন না জীবনানন্দ

নদীকে পুনরুজ্জীবিত করতে উঠছে খননের দাবি।

Dhansiri River in Bangladesh almost dryed
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 18, 2019 6:51 pm
  • Updated:February 18, 2019 6:51 pm  

সুকুমার সরকারঢাকা: ‘আবার আসিব ফিরে, ধানসিড়িটির তীরে / এই বাংলায়।’ কবি জীবনানন্দের এই আকুতির উৎস বাস্তবে প্রায় বিলীন। বিশাল চরের গ্রাসে নদীর বুক। বাংলাদেশের ঝালকাঠির সেই ধানসিড়ি নদী শীতকালে শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে গিয়েছে। পূর্ণ গর্ভের বদলে জল তার হাঁটু সমান। এমনকী হেঁটে পার হওয়া যায়। জীবনানন্দ দাশের প্রিয় ধানসিড়ি নদীটির আজ এমনই অবস্থা। যা দেখলে কবি হয়ত এর তীরে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন না।

Advertisement

১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠির রাজাপুরের বামনকাঠি গ্রামে জন্মেছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ। সেটি তাঁর দাদুর বাড়ি। শৈশবের বিভিন্ন সময় তিনি দাদুর বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। সেই সূত্রেই ধানসিড়ি নদীর প্রেমে পড়েছিলেন। ঝালকাঠির সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘এই নদীর ধানসিড়ি নামটি জীবনানন্দেরই দেওয়া। নদীটির আগের নাম ছিল ধানসিদ্ধ। এখনো বয়োবৃদ্ধরা নদীটিকে ধানসিদ্ধ নামেই জানেন। একসময় এই নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ধান-চালের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল। তখন নদীর দুই পাড়ে চাল ব্যবসায়ীরা বড় বড় উনুন তৈরি করে দিনরাত ধান সিদ্ধ করতেন। কলকাতা-সহ দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে চাল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন। নদীর দুই তীরে ধান সিদ্ধ হতো বলেই এই নদীর নাম হয়েছিল ধানসিদ্ধ।’ জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের খ্যাতির কারণে নদীটি পরিবর্তিত নামেই অধিক পরিচিতি পেয়েছে। জেলা শহরের অদূরে গাবখান সেতুর পাশে চারটি নদীর মোহনা দেখা যায়। বিষখালি, সুগন্ধা, গাবখান ও ধানসিড়ি নদীর মোহনা এটি।  এর উত্তর-দক্ষিণে জীবনানন্দ দাশের ধানসিড়ি নদী বয়ে গিয়েছে।  এই নদী ঝালকাঠি ও রাজাপুরের মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছে। সে অর্থে ধানসিড়ি ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যবাহী।

dhansiri

[সন্তানের স্বার্থে সিরিয়া থেকে ব্রিটেন ফিরতে চান আইএস সদস্য শামিমা]

কিন্তু কালের প্রবাহে এই নদী আজ মৃতপ্রায়।  রূপসিয়া গ্রামের সিকান্দার মিয়া বলেন, নদীতে এখন আর আগে মতো গভীরতা নেই। বাবা-দাদার কাছে শুনেছিলেন, এই নদী দিয়ে একসময় স্টিমার চলত।  নিজেও দেখেছেন, ধানসিড়ি নদী বর্ষার সময় অনেক উত্তাল ছিল। এখন নদী মরে গেছে। বৈদারাপুর গ্রামের অমূল্য রতনের কথায়, ‘বিষখালি ও গাবখান নদীর মোহনায় বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীর মুখের বড় অংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে জোয়ার-ভাঁটা ঠিকমতো খেলছে না। শেষ প্রান্তে গিয়ে নদীটি মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।’ চরকাঠি এলাকার সোহরাব হাওলাদার জানাচ্ছেন, ‘বহু মানুষ আসেন জীবনানন্দ দাশের নদী দেখতে। তবে এখন অনেকেই এখানে এসে হতাশ হন।’ ধানসিড়ির তীরের বাসিন্দা হয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। আর তাই নদীকে বাঁচাতে খননের দাবি জানিয়েছেন। 

[বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বাংলাদেশের সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীরা]

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), ঝালকাঠি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবর্ষে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ধানসিড়ি নদীর উৎসমুখ থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে খননের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই সময় সাড়ে চার কিলোমিটার খনন করা হয়েছিল। নিয়মিত বরাদ্দ না পাওয়ায় বাকি সাড়ে তিন কিলোমিটার আর খনন করা হয়নি। ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৪৯০ মিটার প্রস্থের ধানসিড়ি নদীর রাজাপুর অংশের অবস্থা বেহাল। রাজাপুর বাঘড়ি বাজারের অংশ থেকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার খনন করতে হবে। ৬৪ জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী–খাল–জলাশয় ফের খনন প্রকল্পের আওতায় ধানসিড়ির ড্রেজিং হবে। এর জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। কিন্তু খননকাজ শেষে কবে আবার জেগে উঠবে জীবনানন্দের প্রিয় নদী, এখন তারই অপেক্ষায় ঝালকাঠিবাসী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub