সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবার রাশিয়ার ৬৯টি মাদার ভেসেলকে বাংলাদেশের (Bangladesh) বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার নির্দেশ দিল ঢাকা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ মন্ত্রকের নির্দেশনায় নৌ পরিবহণ মন্ত্রক থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এর আগে ডিসেম্বরের শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ জলসীমান্তে ভিড়তে দেওয়া হয়নি এক রুশ জাহাজকে। বাংলাদেশের পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে রাশিয়া থেকে আসছিল ‘উরসা মেজর’ নামে ওই জাহাজটি। বাংলাদেশে পৌঁছনোর আগেই আমেরিকার তরফে ঢাকাকে জানানো হয়, ওই জাহাজটি স্পার্টা থ্রি নামে রুশ মালিকানাধীন একটি জাহাজ, যার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়তে দিলে সমস্যা হতে পারে। এরপর আর জাহাজটিকে বন্দরে ভেড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার এই তালিকায় রাশিয়ার (Russia)সাতটি কোম্পানির মালিকানাধীন তেল পরিবহণকারী অয়েল ট্যাংকার, সাধারণ পণ্যবাহী কার্গো ভ্যাসেল, গাড়ি পরিবহনকারী RoRo ভেসেল, ড্রেজার, টাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্যাটাগরির জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজকে শুধু বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাই নয়, পাশাপাশি জ্বালানি তেল সরবরাহ (বাংকারিং), রিফুয়েলিং-সহ সব ধরনের পরিষেবা প্রদান থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নৌ পরিবহণ মন্ত্রকের পত্রটি চট্টগ্রাম-সহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলিতে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার সাতটি কোম্পানির মালিকানাধীন ৬৯টি মাদার ভেসেলের চলাচল-সহ সার্বিক পরিষেবা প্রদানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সম্প্রতি রং ও নাম পরিবর্তন করে রাশিয়ান সহায়তায় নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পণ্য নিয়ে আসা একটি জাহাজ বাংলাদেশে আসলে হইচই শুরু হয়। পরবর্তীতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ ওই জাহাজটিকে মোংলা বন্দরে প্রবেশ করতে দেয়নি। ওই ঘটনার রেশ কাটার আগেই ৬৯টি রাশিয়ান জাহাজের একটি তালিকা দিয়ে এসব জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আমেরিকার ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট থেকে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকে জরুরিভিত্তিতে একটি পত্র পাঠানো হয়। ওই পত্রে রাশিয়ার সাতটি কোম্পানির মালিকানাধীন ৬৯টি মাদার ভ্যাসেলের তালিকা প্রেরণ করে জাহাজগুলোর ব্যাপারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবরোনলজিস্টিকা ট্রিপল জিরোর মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ৩টি, এসসি সাউথ এলএলসি জাহাজের সংখ্যা ৪টি, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি নর্দান শিপিং কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ২৭টি, ট্রান্সমরফ্লট এলএলসির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ১৬টি, এম লিজিং এলএলসির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ৩টি, মেরিন ট্রান্স শিপিং এলএলসির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ১টি এবং নর্ড প্রজেক্ট এলএলসি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা ১৫টি মিলে সর্বমোট ৬৯টি মাদার ভেসেল রয়েছে।
বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে একদিন পরই গত ৫ জানুয়ারি নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় একটি পত্র চট্টগ্রাম (Chittagong) বন্দর এবং মোংলা বন্দরের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দপ্তরে পাঠায়। এতে নিষেধাজ্ঞানুযায়ী ৭টি কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত ৬৯টি জাহাজকে বন্দরে প্রবেশ, নিবন্ধন, জাহাজের বাংকারিং, শ্রেণিকরণ, রিফুয়েলিং, বিমা এবং অন্যান্য সামুদ্রিক পরিষেবা ইত্যাদি নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ পতাকা রেজিস্ট্রেশনকারী সংস্থা কর্তৃক জাহাজগুলোর জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী যেকোনো ধরণের রেজিস্ট্রেশন প্রদান না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। বন্দরের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের এমডিসহ বিভিন্ন দফতরে পত্রটি পাঠানো হয়েছে। উক্ত পত্রের সাথে সাতটি কোম্পানির নাম এবং তাদের মালিকানাধীন ৬৯টি জাহাজের তালিকাও প্রেরণ করা হয়েছে।
মার্কিন (USA) নিষেধাজ্ঞার ওই পত্র এবং তালিকা বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঘুরে বিদেশ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছয়। গত ৪ জানুয়ারি বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি জানানোর পাশাপাশি ৬৯টি জাহাজের একটি তালিকা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজগুলোর ব্যাপারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নৌপরিবহণ মন্ত্রী-সহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.