সুকুমার সরকার, ঢাকা: হিসেব বলছে, প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার বাংলাদেশি নানা কারণে কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আসেন। আর ভারত-বাংলাদেশ এই আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেনাপোল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি হল দুই দেশের সীমান্তে প্রধান স্থলবন্দর। তবে, এই পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াত খুবই সময়সাপেক্ষ। নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। আর তাই যাত্রীদের এই কষ্ট লাঘব করতে বাংলাদেশ সরকারের তরফে নেওয়া হল এক নয়া উদ্যোগ। আগামী ১৭ জুলাই থেকেই চালু হচ্ছে বেনাপোল এক্সপ্রেস৷
[আরও পড়ুন: ধর্ষণের ঘটনা রুখতে পুরুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান শেখ হাসিনার ]
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারা বাদে সিংহভাগ মানুষই ঢাকা থেকে বেনাপোল গিয়ে, তারপর বনগাঁ হয়ে কলকাতা-সহ ভারতের অন্যান্য স্থানে গিয়ে থাকেন। তবে ঢাকা থেকে বাসে উঠে ৯০ কিলোমিটার গিয়েই পদ্মা পার হওয়া নিয়ে পড়েন বিপাকে। কেননা, বাসের এত সমস্যা থাকে যে কোনও কোনও সময় প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা ঘাটেই বসে কাটাতে হয়। অতঃপর অযথা মানুষের ভোগান্তি। এই দুর্ভোগ লাঘবের কথা চিন্তা করেই শেখ হাসিনা সরকার ঢাকা-বেনাপোল সরাসরি রেল চালু করার কথা ভেবেছে। এতে লোকসানের মুখে থাকা রেল বিভাগ লাভের পাশাপাশি ভারত ভ্রমণে ইচ্ছুক যাত্রীরা স্বল্প খরচে আরামে ভারতভ্রমণের সুবিধা পাবেন। কথা ছিল ২৫ জুলাই চালু হবে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। তবে তা ৮ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই চালু হচ্ছে যশোরের বেনাপোল-ঢাকা রুটের নতুন ট্রেন ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। ১৭ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন এই ট্রেনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন বেলা ১টা ১৫ নাগাদ ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য বেনাপোল-ঢাকা রুটে চালু হচ্ছে ননস্টপ ট্রেন। ৮৯৬টি আসন বিশিষ্ট এই ট্রেনটিতে থাকবে ১২টি কোচ। উন্নতমানের এই কোচগুলি ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৭ ঘণ্টায় ট্রেনটি বেনাপোল পৌঁছবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ রেলওয়ের (পশ্চিমাঞ্চল) এক আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি চালানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ চলছে। পাশাপাশি, যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য বেনাপোল স্টেশনে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়েটিং রুমটিকে সংস্কার করা হচ্ছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ১২টার সময় ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছাড়বে। আর পরের দিন সকাল আটটার সময় বেনাপোল পৌঁছবে। ফের ১টা ১৫ নাগাদ বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে ট্রেনটি।
[আরও পড়ুন:কিশোরদের মধ্যে বাড়ছে অপরাধের প্রবণতা, বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে গ্যাং]
প্রাথমিকভাবে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই ট্রেনটির নন এসি চেয়ার কারের ভাড়া ৫০০ টাকা এবং আর এসি কেবিনের ভাড়া ১,২০০ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান পরিবহন তত্ত্বাবধায়ক মহম্মদ শাহ নেওয়াজ জানান, ১৭ জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করবেন।
আগামী দু’দিনের মধ্যেই অনলাইন-সহ নতুন এই ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। এটি প্রতিদিন বেনাপোল স্টেশন থেকে ছেড়ে যশোর, ঈশ্বরদী জংশন ও ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য সাময়িক বিরতি দিয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেরশেষ গন্তব্যে গিয়ে থামবে। এ ট্রেনে বিমানের মতো বায়োটয়লেটের সুবিধা রয়েছে। ঢাকাগামী যে ট্রেন পরিষেবা চালু রয়েছে, তা ঢাকায় পৌঁছানোর মধ্যে ১৪টি স্থানে বিরতি নেয়। এতে সময় লেগে যায় প্রায় ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। তবে বেনাপোল এক্সপ্রেস কোনও স্থানে বিরতি নেবে না। অতএব, পৌঁছতে সময়ও লাগবে অনেকটাই কম, প্রায় ৭ ঘণ্টা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.