সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে কিছুতেই থামছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। মশকবাহিত রোগটির প্রকোপে রেকর্ড মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮২। এক বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।
গত দু’বছর ধরে করোনা মহামারী ত্রাস সৃষ্টি করলেও এবার ডেঙ্গুর বিপদ ক্রমে বাড়ছে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মধ্যে। প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ দিয়েছেন। করোনা মহামারী শুরুর বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভরতি হন। এর মধ্যে ১০৫ জন প্রাণ হারান। করোনা মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে ১ লক্ষের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই বছর সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মারা যান ১৭৯ জন। এত দিন এটাই ছিল এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। গত সোমবার নতুন করে ৮২০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন।
সংবাগমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্যদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে সর্বশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্যদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ও মঙ্গলবার ঢাকায় ৪৫০ জন এবং গোটা দেশে ৩৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ২২৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভরতি আছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ৯৪৭ জন এবং দেশের বিভিন্ন সরকারি জেলা ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ২৭৬ জন।
সরকারি পরিসংখ্যান মতে, চলতি নভেম্বরের প্রথম ৮ দিনে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৭৭৮ জন এবং এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জন। গত অক্টোবর মাসে দেশে ২১ হাজার ৯৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হন। মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত (৮ নভেম্বর) দেশে ৪৪ হাজার ৮০২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৪১ হাজার ৩৯৭ রোগী। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ ও ২০ সালেও বাংলাদেশে (Bangladesh) ভয়াবহ রূপ ধরণ করেছিল ডেঙ্গু। করোনা আবহে এই রোগীর আক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই জটিল করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ করে যাদের বিভিন্ন ধরনের হার্টের, কিডনি, থ্যালাসেমিয়ার কিংবা হাঁপানি সমস্যা আছে, তাদের ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি। তাই মানুষের কাছে যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে তৎপর সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.