সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সহ জাতীয় ইতিহাসের বহু আন্দোলন, সংগ্রামের কেন্দ্রস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে তুমুল বিতর্ক। প্রায় তিনদশক পর এই ডাকসু-র নির্বাচন হলো। অভিযোগ, বিরোধীরা নানা ফন্দিফিকির ও টালবাহানা করে বাতিল করতে চাইলেও নির্বাচন পণ্ড করতে পারেনি। তবে বহু বিতর্কের মধ্যে দিয়েই ২৮ বছর পর নির্বাচন সম্পন্ন হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন নিয়ে আপাতত হাওয়া গরম বাংলাদেশের রাজধানীতে।
ষাটের দশকে আইয়ুব-মোনায়েমের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী এনএসএফ ডাকসু নির্বাচন পণ্ড বা বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। অথচ ২৮ বছর পরেও একটি বিতর্কহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারল না দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এমনই মনে করছে শিক্ষকমহলের একাংশ। ছাত্র সংগঠনগুলির নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের লাঞ্ছনা করা হয়েছে। আর এর মধ্যে দিয়ে সময়ের আগেই সরকার-দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাড়া বাকিদের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার সঙ্গে বেমানান বলে অনেকেই মনে করছেন। শাসকদলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলিগের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়েছে যে, বাকি ছাত্র সংগঠনগুলি এককাট্টা হয়ে ভোট বানচালের চেষ্টা করেছে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য গুজব ছড়িয়ে শান্ত পরিবেশকে অস্থির করে তুলেছে। ভোট বর্জনকারী ছাত্র সংগঠনগুলির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘিরে রেখেছে। তাঁরা নির্বাচন বাতিল এবং উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করছেন। নির্বাচন শুরু হওয়ার পর পরই কুয়েত মৈত্রী হলে জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগে ছাত্রছাত্রীরা ভোটগ্রহণ বন্ধের দাবি তোলেন। বিক্ষোভ করে এবং চাপের মুখে ব্যালট বাক্স খুলে তার ভিতর সিল করা ব্যালট পেপার পাওয়া গিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হলের প্রোভোস্টকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ঘণ্টাখানেক ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকার পর পুনরায় তা শুরু হয়। রোকেয়া হলেরও একটি কক্ষে কয়েকটি ব্যালট বাক্স তালা দিয়ে রাখার দাবি তুলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ চালান। তারপর একসময়ে তাঁরা তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে ব্যালট বাক্সগুলি উদ্ধার করে তার ভেতর নতুন ব্যালট পেপার দেখতে পান। সব সংগঠনের ছাত্রনেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা ব্যালট পেপারগুলি সিলবিহীন দেখে বাইরে গিয়ে ভোট বাতিল ঘোষণা করেন। বিশেষ করে কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রনেতা নুরুকে ছাত্রলিগের মেয়েরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ আনা হলেও ঘটনার ভিডিও-তে দেখা যায়, নুরু মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে।
বাতিল আরও দুই জেহাদি বধূর নাগরিকত্ব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা অনেক ক্ষেত্রেই রক্তপাত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার-প্রচারণা কোনওরকম হিংসা ছাড়াই শেষ হয়েছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজি মহম্মদ মহসিন হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সব পদে ছাত্রলিগ সমর্থিত প্রার্থীরাই জয় পেয়েছেন। এই হলে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলিগ সমর্থিত প্রার্থী শহিদুল হক শিশির এবং জিএস পদে একই প্যানেলের মেহেদি হাসান মিজান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মহম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছে। তারা শৃঙ্খলা বজায় রেখে ভোট দিয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দৃষ্টান্ত।
সোমবার সকাল ৮টায় দেশের ‘দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পরে দুপুরে ভোটে অনিয়ম, কারচুপি, জাল ভোট ও ছাত্রলিগের আধিপত্যের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে ছাত্রলিগ ছাড়া নির্বচনে অংশগ্রহণকারী অন্য সব প্যানেল। একইসঙ্গে অবিলম্বে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে তারা। এছাড়াও মঙ্গলবার থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে প্যানেলগুলো। এই সময় সব ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এই চার প্যানেলের পক্ষ থেকে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী এই ঘোষণা করেন। সোমবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হয়। তবে রোকেয়া হলে এক ঘণ্টা দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.