সুকুমার সরকার, ঢাকা: শক্তিশালী বুলবুলের ভয়াবহ তাণ্ডব থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে খানিকটা বাঁচিয়ে দিল সুন্দরবন। রবিবার ঝড়ের গতিবেগ কমেছে। পাশাপাশি, তা বিকেল নাগাদ শক্তি আরও কিছুটা হারিয়ে মেঘালয় ও অসমমুখী হবে বলে জানিয়েছে ঢাকার আবহাওয়া দপ্তর। তবে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন খুলনার এক মহিলা-সহ ৩ জন।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে দাপটে ম্যানগ্রোভ ঘেরা সুন্দরবনের বিপুল সংখ্যক গাছপালা উপড়ে পড়েছে ও ভেঙে গেছে। তারপর বুলবুল বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে আছড়ে পড়ে শনিবার রাত ৩টে নাগাদ। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ঝড়ের দাপটে সুন্দরবনের অনেক গাছাপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ঝড়ের গতিবেগ থেকে উপকূলীয় জেলার মানুষকে বাঁচাতে আগেই ২১ লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যে কারণে বহু জীবন রক্ষা পেয়েছে। তবে পটুয়াখালি ও খুলনায় তিনজন নিহত হয়েছে।
বুলবুল বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তার অবস্থান ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একপাশে পশ্চিমবঙ্গ, আর বাকি তিন পাশে ছিল সুন্দরবন। সুন্দরবন অতিক্রম করতে ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘ সময় লাগে, এবং গতিও কমে আসে। ফলে পূর্ণ শক্তি নিয়ে বুলবুল বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত করতে পারেনি। আজ রাজধানী ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘বুলবুল যে গতিতে আসার কথা ছিল, সেই গতিতে আসেনি। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে সুন্দরবনের সাগরদ্বীপে আঘাত করে। এরপর এটি বাংলাদেশের সুন্দরবন লাগোয়া খুলনায় ঢুকে পড়ে। দুই দেশের সুন্দরবনের অরণ্যের গাছপালায় বাধা পেয়ে দুর্বল বুলবুলের কেন্দ্রে বায়ুর গতিবেগ কমে যায়। জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতাও কমে আসে।’
তবে ঝড়ের দাপটে সাতক্ষীরার কয়েকটি অংশে ৮০ শতাংশ কাঁচা ও আধপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। নদীতে এ সময় ভাটা থাকলেও ঝড়ের তাণ্ডবে নদীর জল বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। রবিবার সকাল ৭টা নাগাদ জোয়ার আসার পর থেকে জলোচ্ছ্বাসে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বহু এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে,বুলবুল ধেয়ে আসার বিপদ সংকেতের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাইক্লোন আশ্রয় শিবিরে চলে গিয়েছিলেন খুলনার দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের বাসিন্দা প্রমীলা মণ্ডল। রবিবার সকালে ঝড়বৃষ্টির দাপট খানিকটা কমলে, তিন নিজের বসতভিটে দেখতে যান। কিন্তু সেখানেই তাঁর মৃত্যুফাঁদ পাতা ছিল। বাড়ির কাছেই গাছ উপড়ে তাঁর উপর এসে পড়ে, প্রাণ হারান প্রমীলাদেবী।
বুলবলের শক্তিক্ষয় হলেও, তার প্রভাব রবিবার দিনভর টের পাচ্ছেন বাংলাদেশবাসী। রাজধানী ঢাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য বন্ধ ফেরি চলাচল। রবিবার হওয়ায় পথেঘাটে মানুষজনও কম। তবে সৈকত শহর কক্সবাজারে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক এখনও হোটেলবন্দি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.