সুকুমার সরকার, ঢাকা: কিশোরদের অপরাধ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ঢাকায়৷ বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, কিশোর বয়সেই মগজধোলাই করে তাদের নানা কুকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আরেকদিকে কিশোর বয়সে ঝোঁকের বশেই কেউ কেউ খুনের মতো অপরাধ ঘটিয়ে ফেলছে৷ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ঢাকায় ৯৯টি খুনের মামলায় সন্দেহের তির তিনশোরও বেশি কিশোরের বিরুদ্ধে৷ এদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে৷ এদের মধ্যে ২৭ জনকে আদালতের মাধ্যমেই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে৷
গত ৯ জুন হাজারিবাগ এলাকায় ১৫ বছর বয়সী ইয়াসিন আরাফত খুন হয় তারই সমবয়সীদের হাতে। পুলিশের মতে, বড়-ছোটর দ্বন্দ্বের বলি হয়েছে ইয়াসিন৷ শিশু-কিশোর অপরাধের মামলার বিচার হয় ঢাকার শিশু আদালতে। এই আদালতে ২০১৮ সালের ৩১ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ছিল ১৩৮১টি, যার মধ্যে খুনের মামলা ৮৬টি৷ তিন বছর বেশি সময় ধরে ঢাকার শিশু আদালতে কর্মরত সরকারি কৌঁসুলি শাহাবুদ্দিন মিঞা৷ তিনি জানান, ঢাকায় বহু খুন, ধর্ষণ, মাদক-সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে শিশু-কিশোররা। আর বড়-ছোট দ্বন্দ্বের জেরেই সবচেয়ে বেশি কিশোর খুন হচ্ছে।
সূত্রের খবর, ঢাকার উত্তরা, হাজারিবাগ, চকবাজার এলাকাগুলিতে কিশোরদের একটি গ্যাং তৈরি হচ্ছে, যারা খুন, ধর্ষণ, মাদক-সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে শিশুরা৷ সমাজকর্মীরা বলছেন, কিশোরদের সমাজের প্রতি যে দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠা উচিত, তা হচ্ছে না৷ আগে যে পারিবারিক, সামাজিক অনুশাসন ছিল, তা ভেঙে পড়েছে৷ মা, বাবা বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঠিকমতো বাচ্চাদের সময় দিতে পারছেন না৷ ফলে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ায় তাদের মানসিকতা বদল আসছে৷ কখনও মাদকাসক্তিও দেখা যাচ্ছে৷ এমনকী প্রেম সংক্রান্ত জটিলতা থেকেও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এই কিশোররা৷ যার শিকার ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সিরা৷ দেখা গিয়েছে, এভাবে খুন হওয়ার কিশোররা বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত পরিবারের৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগের ডিসি ইব্রাহিম খান জানাচ্ছেন, উত্তরায় যেভাবে কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠেছে, সেভাবে পুরনো ঢাকায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেই৷ কারণ, পুরনো ঢাকা অনেক জমজমাট এলাকা৷ বিভিন্ন বেআইনি কাজে যুক্ত শতাধিক শিশু-কিশোরকে নিয়ে কাজ করে সমাজসেবা বিভাগ৷ এখানকার অধিকর্তা সুমন মধু বলেন, মাদক, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই-সহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে শিশুরা৷ দিনদিন মামলার সংখ্যাও বাড়ছে৷ যা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.