বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) খুন হন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ। ফাইল ছবি
সুকুমার সরকার, ঢাকা: ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) খুন হন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ। ছাত্র লিগ ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের সংঘাতে আবরারকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় এই হত্যাকাণ্ডে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। বহুদিন মামলা চলার পর ২০২১ সালে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করে আদালত। আজ রবিবার এই সেই রায়ই বহাল রাখল হাই কোর্ট। এই মামলায় সেই ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবনের সাজাই দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন চান আবরারের মা।
তৎকালীন শাসকদল আওয়ামি লিগের ছাত্র শাখা ছাত্র লিগ ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের সংঘাত ব্যাপক আকার নেয় বুয়েটে। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ খুন হন। তাঁকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকেই আবরারের দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনায় আগুন জ্বলে ওঠে বাংলাদেশে। সেই সময় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ঢাকার চকবাজার থানায় ছাত্র লিগের ১৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সংগঠনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রাসেল-সহ বুয়েট শাখার ১২ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে ছাত্র লিগ। এরপর সেই বছরের ১১ অক্টোবর বুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে দেয়। সেই হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আদালত ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করে।
সেই রায় বহাল রেখেই আজ সাজা ঘোষণা করেছে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ।
মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে আবেদন জানানো হয়। আজ রায় ঘোষণার পর আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, রায়ে তাঁরা আপাতত সন্তুষ্ট। তবে এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। এই একই ইচ্ছে সন্তানহারা মায়েরও। ২০১৯ সালে দায়ের করার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্র শিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এই মামলার আসামিরা সকলে বুয়েট শাখা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র লিগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, মহম্মদ অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মহম্মদ মনিরুজ্জামান মনির, মহম্মদ মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মহম্মদ মাজেদুর রহমান মাজেদ, মহম্মদ মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মহম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মহম্মদ শামসুল আরেফিন রাফাত, মহম্মদ মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। এর মধ্যে মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের দেওয়াল ভেঙে পালান বলে জানায় জেল কর্তৃপক্ষ। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নারকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.