সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিশ্বের অনেক দেশে যখন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমছে তখন বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনার প্রকোপ। আর এর মূল কারণ হিসেবে ঢিলেঢালা লকডাউন (Lockdown) -কেই দায়ী করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ২৩৯ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৬৯১ জন। রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্তের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ৩৪ নম্বরে। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান আর ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে মাত্র দুমাসেই এশিয়ার হটস্পটে পৌঁছে গিয়েছে। জনঘনত্ব ও আক্রান্তের হারে সংক্রমণের এই সূচক ভয়ংকরভাবেই স্পষ্ট।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের গতিতে সপ্তাহ খানেক আগেও এশিয়ার হটস্পট ছিল পাকিস্তান। তবে গত কয়েকদিনে পাকিস্তানকে টপকে একলাফে শীর্ষে উঠে যায় ভারত। আর এখন প্রতিবেশী সবাইকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে বাংলাদেশ। এখানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। তারপর থেকে প্রতিদিনই আক্রান্তের নতুন রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে এশিয়ার পরবর্তী হটস্পটে পরিণত হচ্ছে। করোনা শনাক্তের দুমাস পর সেই চিত্র আরও পরিষ্কার।
সোমবারই প্রথমবারের মতো করোনা সংক্রমণের সংখ্যা একদিনে হাজার ছাড়িয়েছে। এই হিসেবেও এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি। আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪ তম। গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেন ও রোমানিয়াকে পেছনে ফেলে সংক্রমণে এখন এশিয়ায় দশম স্থানে রয়েছে। আক্রান্তের হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পিছনে থাকলেও সংক্রমণ হারে এশিয়ার অর্ধশতাধিক দেশের শীর্ষে এখন বাংলাদেশ। পাকিস্তানে ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮৯৪টি নমুনার মধ্যে করোনা পজিটিভ ৩০ হাজার ৯৪১ জন। সংক্রমণের হার ১০.৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে সোমবার পর্যন্ত একলক্ষ ২৯ হাজার ৮৬৫ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৯১ জন। সংক্রমণের হার ১২.০৮ শতাংশ। সিঙ্গাপুরে একলক্ষ ৭৫ হাজার ৬০৪ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৮২২ জনের। সংক্রমণের হার ১৩.৫৬ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় এক লক্ষ ৬১ হাজার ৩৫১ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ২৬৫ জনের। সংক্রমণের হার ৮.৮৪ শতাংশ। এই সব দেশে বাংলাদেশের তুলনায় করোনা পরীক্ষার হার তিনগুণের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মায়ানমারে গত কয়েক সপ্তাহে কোনও মৃত্যু নেই। এসব দেশে আক্রান্তের সংখ্যাও হাতে গোনা, এক হাজারের কম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় সংক্রমণ বাড়লেও করোনা পরীক্ষার হার এখনও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। পিক আওয়ারেই লকডাউন শিথিল হওয়ায় ভয় আরও বাড়ছে। দেশে লকডাউন পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। গণপরিবহণ ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের দেখা মিলছে সড়কগুলোতে। কাঁচাবাজার তো আগেই খোলা ছিল, এর সঙ্গে চালু হয়েছে অন্যান্য দোকানপাটও। মার্কেটগুলোর সামনে বাড়ছে ভিড়। ঢাকার রাস্তাতেও শুরু হয়েছে যানজট। ফলে ক্রমশই কঠিন হয়ে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি। প্রথম মাসে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০-এর উপরে ওঠেনি। প্রথম চার সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১৮ জন। মৃত্যু ২০ জন। কিন্তু, দ্বিতীয় মাসের শুরু থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সংক্রমণের দ্বিতীয় মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথমদিনই আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৫০০ জন করে আক্রান্ত হয়েছে এই মারণ ভাইরাসে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.