সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা বিতর্কিত সেনানায়ক হুসেন মহম্মদ এরশাদের শেষকৃত্য আজ৷ তবে শেষ মুহূর্তেও সমাধিস্থল নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান হল না৷ কোথায় তাঁকে সমাধি দেওয়া হবে, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছেই৷ চলছে হুমকি, পালটা হুমকির পালা৷
রবিবার এরশাদের মৃত্যুর পর প্রথমে তাঁকে বনানীর সামরিক কবরস্থানে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এরশাদের স্ত্রী রওশনের ইচ্ছা, তাঁর স্বামীকে ঢাকাতেই দফন করা হোক। দলের নেতাকর্মীদের একাংশের দাবি, এরশাদকে দফন করা হোক উন্মুক্ত কোনও স্থানে, যেখানে তাঁরা অবাধ প্রবেশ থাকবে৷ কারণ, দলের নেতারা বুঝতেই পেরেছেন, এরশাদের শেষকৃত্যে প্রচুর জনসমাগম হবে৷ এদিকে, এরশাদকে তাঁর নিজের জেলা রংপুরে সমাহিত করার দাবিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় জাপা নেতা-কর্মীরা। এই টানাপোড়েনের জেরে শেষপর্যন্ত কোথায় সমাধিস্থ হবেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, তা নিয়ে শেষমুহূর্তেও সংশয় থাকছে৷
পূর্ব পরিকল্পনামতো মঙ্গলবার সকালে এরশাদের মরদেহ রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে দুপুরের নমাজের পর জানাজা শেষে মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু রংপুরের জাপা নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন, এরশাদের মরদেহ তাঁরা কিছুতেই ঢাকায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেবেন না৷ রংপুরে এরশাদের বাসভবন ‘পল্লি নিবাস’-এর পাশে তাঁকে দফন করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সেখানে কবর খোঁড়াও হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী রওশন বলছেন, এরশাদের ইচ্ছা ছিল, তাঁকে যেন দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সেনানিবাসে দফন করা হয়। কিন্তু এরশাদের প্রাক্তন স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক ফেসবুকে দাবি করেছেন, এরশাদের ইচ্ছা ছিল রংপুরে তাঁর শেষকৃত্য হোক।
রংপুরের আরকে রোডের দর্শনীয় স্থান এরশাদে বাড়ি পল্লি নিবাস৷ সেখানে লিচুতলায় এরশাদের জন্য সমাধি তৈরি হয়েছে। তবে এখানেই তিনি অন্তিম শয্যায় শায়িত হবেন কি না, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি জাপা নেতৃত্ব৷ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার-সহ আরও কয়েকজন বরিষ্ঠ নেতার মতে, প্রাক্তন সেনাপ্রধান হিসেবে এরশাদকে সেনানিবাসে দফন করা উচিত। তবে আরেকাংশের দাবি, রংপুরেই এরশাদকে সমাহিত করা হোক। তাঁদের যুক্তি, এই অঞ্চলের মানুষের সমর্থনের কারণেই ক্ষমতা ছাড়ার ২৯ বছর পরও রাজনীতিতে টিকে ছিলেন এরশাদ। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেছেন, ‘এরশাদকে রংপুরেই দফন করতে হবে। রংপুর থেকে তাঁর দেহ লাশ কোনওভাবেই ঢাকায় নিতে দেওয়া হবে না।’ ফলে এরশাদের শেষকৃত্যেও ঢাকা-রংপুর দ্বৈরথ জিইয়ে রইল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.