সুকুমার সরকার, ঢাকা: কয়েকমাস আগে চিন বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও এর জন্য আর্থিক খরচ ভাগাভাগির কথা জানালে তাতে রাজি হয়নি ঢাকা। ফলে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এবার ফের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের প্রস্তাব দিয়েছে চিনের একটি প্রতিষ্ঠান। এর সব খরচও বহন করবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষা সফল হলে বাংলাদেশে গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদনের কারখানা স্থাপনেরও উদ্যোগ নেবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে।
সূত্রের খবর, করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা, গবেষণা ও উৎপাদনের জন্য কারখানা তৈরির প্রস্তাবটি দিয়েছে চিনের আনুই জিফেই লংকম বায়োফার্মাসিউটিক্যাল (Anhui Zhifei Longcom Biopharmaceutical) কোম্পানি লিমিটেড। এটি চংকিং জিফেই বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এর আগে চিনের টিকা উদ্ভাবন ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বাংলাদেশকে টিকার পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আর্থিক বিষয় নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এরপর চিনের আনুই জিফেই গত ২ সেপ্টেম্বর তাদের উদ্ভাবিত আরভিডি-ডিমার টিকা পরীক্ষার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে (BSMMU) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়।
বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে আনুই জিফেইকে বেশ কিছু শর্ত মেনে বিস্তারিত প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। এসব শর্তের অন্যতম হচ্ছে, করোনার টিকার পরীক্ষার বিষয়ে চিন সরকারকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিতে হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব (সেবা বিভাগ) আবদুল মান্নান জানান, চিনের প্রতিষ্ঠানটি বিএসএমএমইউকে করোনার টিকার পরীক্ষা ও গবেষণার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়টিরও উল্লেখ আছে। প্রতিষ্ঠানটিকে বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিস্তারিত প্রস্তাব ও সংশ্লিষ্ট কাজের পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। এগুলি পাওয়া সাপেক্ষে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (BMRC) সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কানাডার ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটির অর্থায়নে পরিচালিত ওয়েবসাইট কোভিড-১৯ (Covid-19) ভ্যাকসিন ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, চিনে আনুই জিফেই আরভিডি-ডিমার টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে তৃতীয় ধাপে পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত এই তিন দেশে টিকার পরীক্ষার প্রস্তুতি থাকলেও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনও দেশে টিকা উৎপাদনে আগ্রহী নয় প্রতিষ্ঠানটি।
আনুই জিফেইয়ের ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক লেই সিয়াওতিং জানান, ‘করোনার টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য আমরা সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশকে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্র্যাকারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আমেরিকার ফাইজার ও মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং চিনের সিনোফার্মের টিকা অনুমোদন পেয়েছে। আর ১৫টি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। এগুলোর মধ্যে আনুই জিফেইয়ের আরভিডি-ডিমার টিকা রয়েছে। আনুই জিফেইয়ের প্রস্তাব নিয়ে গত তিন মাসে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা করেছে। আনুই জিফেই বাংলাদেশে করোনার টিকার পরীক্ষার জন্য চুক্তিবদ্ধ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (CRO) হিসেবে বিএসএমএমইউকে যুক্ত করতে চায়। এর পাশাপাশি আনুই জিফেই প্রযুক্তিগত গবেষণার কাজে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকেও (IEDCR) যুক্ত করতে চায়। তাদের প্রস্তাব বিএমআরসির অনুমোদন পেলে আইইডিসিআর আনুই জিফেইয়ের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে যৌথভাবে গবেষণায় রাজি আছে।
এপ্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার প্রাক্তন পরিচালক বেনজির আহমেদ জানান, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখনও কমেনি। সংখ্যার ওঠানামা হলেও সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। কাজেই সামাজিক সংক্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে টিকার পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ এ মুহূর্তে উপযুক্ত ক্ষেত্র। আর টিকার পরীক্ষা হলে লাভ ছাড়া কোনও ক্ষতি নেই। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে টিকার পরীক্ষা হলে জানা যাবে, সেটি এখানে কতটা কার্যকর হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার অধিকারও নিশ্চিত হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.