সুকুমার সরকার, ঢাকা: দীর্ঘ ৫৫ বছর প্রতীক্ষার পর শুরু হতে চলেছে ভারতের হলদিবাড়ি ও বাংলাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটির মধ্যে বন্ধ থাকা রেল পরিষেবা। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) থেকেই চলবে রেল। প্রথমে পণ্যবাহী ট্রেন চললেও আগামী ২৬ মার্চ থেকে এ পথটি দিয়ে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলপথে দুই বাংলার সংযোগ স্থাপনের ওই মাহেন্দ্রক্ষণ ঘিরে চিলাহাটি রেলস্টেশন সেজেছে অপরূপ সাজে। আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। এদিন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও মোদির মধ্যে ভারচুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দুই দেশের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রক সূত্র জানায়, বৈঠকের আগেই দু’দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব চুক্তি ঘোষণা করা হবে। যে চারটি চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো- দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা, দুই দেশে মধ্যে হাতি সংরক্ষণ সহযোগিতা, বরিশালে একটি পয়ঃনিষ্কাশণ প্ল্যান্ট তৈরি ও কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বড় পর্দায় দেখানো হবে চিলাহাটিতে স্থাপিত প্যান্ডেলে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন রেলমন্ত্রী মহম্মদ নূরুল ইসলাম সুজন।
ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতে যোগাযোগের অন্যতম রেলপথ ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ী। এই পথ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করত দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একাধিক যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন। ওই রেল যোগাযোগকে ঘিরে চিলাহাটিতে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সে সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত চিলাহাটিতে গড়ে উঠেছিল মার্চেন্ট সমিতি। সেই মার্চেন্ট সমিতির হাত ধরে এলাকায় হয়েছিল বিভিন্ন উন্নয়ন। তারই নিদর্শন চিলাহাটি মার্চেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর পথটি বন্ধ করে দেওয়া হলে স্থবির হয়ে পড়ে নীলফামারী-সহ আশপাশের জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য। সেই থেকে ফের রেলপথ চালুর দাবি তোলে এলাকাবাসী। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর পথটি ফের চালুর উদ্যোগ নেয় দুই দেশের সরকার। নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ অংশের ৬.৭২ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ এরমধ্যে শেষ হয়েছে। ৮০ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পে রেললাইন স্থাপন ছাড়াও বসানো হয়েছে চার কিলোমিটার লুপ লাইন, আটটি লেভেলক্রসিং ও ৯টি ব্রিজ-সহ অন্য পরিকাঠামো।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে। অন্যদিকে ভারত হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন-সহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করে তাদের অংশে চালিয়েছে পরীক্ষামূলক ট্রেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে তাদের অংশেও নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। এর মধ্যে বাংলাদেশে (Bangladesh) প্রবেশদ্বারে (তাদের অংশে) রেলপথের ওপর স্থাপন করা হয়েছে স্থায়ী তোরণ। আজ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন ঘোষণার পর চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে পণ্যবাহী একটি ট্রেন ছেড়ে যাবে ভারতের হলদিবাড়ির দিকে। ওই ট্রেনে থাকবে ভারতীয় ৩২টি খালি ওয়াগন। আর সেটিকে টেনে নিয়ে যাবে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ইঞ্জিন। এসব ওয়াগান হলদিবাড়ি রেলস্টেশনে রেখে ফের সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসবে ইঞ্জিনটি। গত ১০ ডিসেম্বর নীলফামারী জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ওই রেলপথ উদ্বোধনের প্রস্তুতিমূলক সভা। ওই সভায় রেলপথমন্ত্রী মহম্মদ নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, উদ্বোধনের পর থেকে এ পথে আপাতত দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে পথটি দিয়ে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.