সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের (Bangladesh) রূপগঞ্জের ফলের রস তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এবার মালিকানা সংস্থা সজীব গ্রুপের প্রধান CEO শাহেনশাহ আজাদকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ না থাকায় এতজনের প্রাণহানি, এই অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে তার বিরুদ্ধে। শনিবার তাকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৫৫ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ঢাকার ফার্মগেটের সিজান পয়েন্টে সজীব গ্রুপের অফিস থেকে শাহেনশাহ আজাদকে একটি গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। দমকল আধিকারিক ও কারখানার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কারখানা ভবনটির চতুর্থ তলায় কেচিগেট তালাবদ্ধ রাখায় ওই তলার শ্রমিকরা আগুন লাগার সময়ে বের হতে পারেননি। জানা গিয়েছে, ওই তলাতেই ৪৯ জন ঝলসে গিয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। বিপুল প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেম বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, ”কারখানায় কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কারখানায় কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? আমি তো কারখানায় গিয়ে আগুন লাগাইনি। অথবা আমার কোনও ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে অথবা কোনো শ্রমিক সিগারেট খেয়ে ফেলে দিয়েছে।” তবে তিনি এও বলেন, ”যারা মারা গিয়েছেন, তারা তো আমারই ছেলেমেয়ে। আমি খুব ভেঙে পড়েছি। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, আমার ছেলেমেয়েদের পাশে থাকতে।” গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাশেম ফুডের সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগে। সেই আগুন গতকাল দুপুরের পও নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে লাশগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে দেখে চেনা বা শনাক্ত করার উপায়ও নেই। এই মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ (DNA)পরীক্ষা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষকেই দায়ী করছেন শ্রমিক ও নিহতের স্বজনরা। তারা বলছেন, ভবনের নিচে ও ওপরে লোহার গেট তালাবদ্ধ থাকায় পুড়ে মরতে হয়েছে শ্রমিকদের। ভয়াবহ ওই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে শ্রমিকদের অভিযোগ, বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করায় পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে। ওই কারখানার শ্রমিক বিশাখা রানী বলেন, ”বেতন ভাতা ও ওভারটাইম না পাওয়ায় আমরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। এই কারণে আমরা শ্রমিকরা বেতন, ভাতার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করি। আর এই ক্ষোভেই কারখানা মালিকপক্ষ এই ভবনে আগুন লাগিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করে। আমরা হত্যার বিচার চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.