অঙ্কন: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
সুকুমার সরকার, ঢাকা: ব্যবসায়ীর সঙ্গে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের বিস্ফোরক অভিযোগ বাংলাদেশের এক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে। পাওনা টাকা আদায় করতে তাঁরই নির্দেশে মাঝরাতে ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দিয়ে জোর করে চেক সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শেষমেশ পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে নিজেকে বাঁচাতে এখন পুলিশেরই দ্বারস্থ হয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের নাম সাজ্জাদুর রহমান। তিনি রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার পদে কর্মরত। ঘটনা ঘিরে সরগরম ধানমন্ডি থানা এলাকা।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ জানুয়ারি। ব্যবসায়ী মেহেদি শেখ জানিয়েছেন, ওইদিন মাঝরাতে গুলশনে তাঁর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। বলা হয়, ৫০ লক্ষ টাকা দেনা শোধ করতে থানায় যেতে হবে। প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি মেহেদি। রাতভর তাঁকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরেরদিন বিকেলে টাকার জন্য মেহেদি শেখের বাড়ি থেকে তাঁর চেকবই আনিয়ে নেয় পুলিশ। একটিতে ৬৫ লক্ষ, আরেকটিতে ৬০ লক্ষ টাকার অঙ্ক বসিয়ে জোর করে মেহেদিকে দিয়ে তা সই করিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বেশ কয়েকদিন পর গত ১২ তারিখ ব্যবসায়ী মেহেদি খান পুলিশের দ্বারস্থ হন সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেখানেই তিনি সব কথা প্রকাশ করেন। পেশায় গুঁড়ো দুধের ব্যবসায়ী মেহেদি খানের সঙ্গে কার্যত অনৈতিক চুক্তি করেন রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার সাজ্জাদুর। তিনি মেহেদিকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। বিনিময়ে মেহেদি তাঁকে প্রতি মাসে আড়াই লক্ষ টাকা দিতেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে পারস্পরিক এই হিসেব বুঝে নিতে সাজ্জাদুর নিজের শ্যালক শুভ্রকে কাজে লাগিয়েছিলেন।
এভাবেই চলছিল। কিন্তু একটা সময়ে মেহেদির ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির জেরে তিনি সাজ্জাদুরকে লাভের বখরা দিতে পারছিলেন না। এতেই খেপে ওঠেন পুলিশ কর্তা সাজ্জাদুর রহমান। তাঁকে চাপ দিতে থাকেন বলে অভিযোগ। মেহেদিকে দিয়ে ৫০ লক্ষ টাকার একটি চেক সই করিয়ে নেওয়া হয়। সেই চেক বাউন্স করলে মামলা করেন সাজ্জাদুরের শ্যালক শুভ্র। মামলায় আপাতত জামিনে মুক্ত ব্যবসায়ী মেহেদি খান। কিন্তু তারই মধ্যে রাতে বাড়িতে হানা দিয়ে জোর করে মেহেদিকে দিয়ে মোট ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার চেক সই করানোর অভিযোগ ওঠে রমনার পুলিশ উপকমিশনারের বিরুদ্ধে। সেই চেকও বাউন্স করলে, আইনি নোটিস পাঠানো হয় মেহেদির কাছে।
এরপর আর থাকতে না পেরে মেহেদি পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে সমস্ত অপরাধ কবুল করেন। ঘটনায় দুই কনস্টেবলও জড়িত বলে অভিযোগ তাঁর। ঢাকা ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন যে অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এ ধরনের বেআইনি আর্থিক লেনদেনে অভিযুক্ত পুলিশকর্তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ, সেক্ষত্রে কীভাবে এগোবে পুলিশ? এই প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা পুলিশের প্রাক্তন ডিজি জানিয়েছেন যে কেউ যদি বিপদে পড়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন, তাহলে পুলিশ সাধারণভাবে তাঁকে সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রেও সেভাবেই এগনো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.