সুকুমার সরকার, ঢাকা: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়না। গোপালগঞ্জের দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। জেলার প্রশাসক কাজি মাহবুবুল আলম এই তথ্য জানিয়েছেন। এই স্বীকৃতির ফলে জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মত তাঁর।
জানা গিয়েছে, জিআই পণ্য হিসেবে গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়না শিল্প মন্ত্রকের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক জার্নালে প্রকাশ করা হয়। জিআইয়ের পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩-এর ধারা ১২ অনুসারে এই পণ্যটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কাজি মাহবুবুল আলমের কথায়, “এই স্বীকৃতি ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির সঙ্গে যুক্ত কারিগরদের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ব্রোঞ্জ শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এলাকার আর্থ-সামজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।” চলতি বছরের ১২ মার্চ জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার জন্য জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও দপ্তরগুলোতে আবেদন করা হয়। এর আগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জেলার প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি লাভ করেছিল।
জিআই তকমা নিয়ে ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন সদস্য সুভাষ বৈদ্য বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডে প্রায় ১০০ বছর আগে গড়ে উঠেছিল ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির পল্লী। পরে এটি সারা জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লীকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার সুখ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এটি বিদেশের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। আমাদের এখানে ব্রোঞ্জের গয়না তৈরি হলেও এই শিল্পে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই সাম্প্রতিককালে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের ব্রোঞ্জের গয়না আমাদের বাজারের প্রায় ৫০ ভাগ দখল করে নিয়েছে।”
জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটে এখনও ৪৫টি দোকান রয়েছে। সেখানে এখনও ব্রোঞ্জের গয়না বিক্রি হয়। এসব অলংকার তৈরি করেন জলিরপাড় গ্রামের জগদীশ শীল। তিনি বলেন, “ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির তামা, দস্তা ও পিতলের দাম বেড়েছে। ভারত- সহ অন্যান্য দেশের ব্রোঞ্জ গয়নার রং খুব চকচকে। আমাদের গয়নার রং তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। সুদৃশ্য, মনোহর ও শৌখিন দামি গয়নার বাজার ভারত ও চিনের দখলে চলে গিয়েছে। তাই কানের দুল, হাতের বালা-সহ যেসব গয়নার চাহিদা রয়েছে সেগুলোই আমরা তৈরি করি। সরকার এই শিল্পে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সব ধরনের সহযোগিতা করলে আমরা ব্রোঞ্জ গয়নার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারব। আধুনিক যন্ত্রপাতি কাজে লাগিয়ে আমরাও দামি গয়না তৈরি করতে পারি। এতে শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা আরও বেশি উপার্জন করতে পারবেন। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে।” জলিরপাড়ের কিছু বাসিন্দা নদিয়া জেলার কল্যাণীর ঘোষপাড়া ও কল্যাণী সীমান্তে ব্রোঞ্জ গয়না শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.