সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভোটমুখী বাংলাদেশে গত মাস দেড়েক ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। চলছে অবরোধ-বনধ কর্মসূচি। এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩৭৬ বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজ করার জন্য নাকি হামলাকারীদের দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকার পুরস্কার! প্রকাশ্যে এসেছে এমনই তথ্য। যানবাহন ভাঙচুর করা ও আগুন লাগানোর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি কর্মীদের ‘আগুনসন্ত্রাসী’ হিসাবে অভিহিত করেছেন।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ডের পরদিন থেকে গোটা দেশে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি-জামাত-সহ সমমনা ‘মৌলবাদী’ দলগুলো। বাসের পাশাপাশি হামলা চালানো হয়েছে ট্রেনেও। উপড়ে ফেলা হয়েছে রেললাইন। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট বা সিটিটিসি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছে, “একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে ছাত্রদল নেতা রকি। প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দেওয়া হত, দ্বিতীয় অবরোধে তা দ্বিগুন করা হয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কারের অর্থ পাঠানো হত৷”
জানা গিয়েছে, রাজধানী ঢাকার মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন পরিবহণের বাসে টাকার বিনিময়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর এই কাজের হোতা ঢাকা মহানগর ছাত্রদল নেতা আমির হোসেন রকি। সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বাসে আগুন লাগানোর সময় হাতেনাতে আটক করা হয় আলি আমিন নামে এক ব্যক্তিকে। আমিনের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে আমির হোসেন রকিকেও। এর পর মিজানুর রহমান ও সাকিব নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান আরও জানান, ছাত্রদল নেতা রকির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসির একটি টিম কাজ শুরু করেছে। ঢাকার মিরপুরে শিকড় পরিবহণের একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিএনপি নেতা মামুনের নির্দেশে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ বলছে, শুধু বাসই নয়, বাদ যাচ্ছে না দোকানগুলোও। রহস্যজনকভাবে আগুন লাগছে বড় বড় মার্কেটগুলোতে। এদিকে বাংলাদেশের (Bangladesh) এই আগুন কাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিক চায়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
গত তিন মাসে ৬৯টি নাশকতার মামলায় বিএনপির ১ হাজার ২৬ জন নেতাকর্মীর সাজা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। পুলিশ বলছে, অগ্নিসংযোগকারীরা ছদ্মবেশে ও যাত্রীবেশে কাজগুলো করছে। তারা পুলিশের গতিবিধি নজরে রেখে ফাঁকা জায়গায় কাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে। এ কারণে বিষয়টি রোখা পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছে। বলে রাখা ভালো, দুদিন আগেই লাইনচ্যুত হয়ে যায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। নাশকতা ঘটনার জন্য রেললাইন কেটে রাখার অভিযোগ ওঠে। যার জেরে লাইনচ্যুত হয়ে যায় ট্রেনটির সাতটি বগি। প্রাণ হারান ১ যাত্রী। আহতও বেশ কয়েকজন। তবে ট্রেনের গতি কম থাকায় ব্যাপক প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে বলে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.