প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চরম অরাজক পরিস্থিতি বাংলাদেশে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছতে দিকে দিকে হামলা, ভাঙচুর জারি রয়েছে। অত্যাচারিত হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও। বিপন্ন গণতন্ত্র। সাম্প্রতিক এই ঘটনা কোনওভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এভাবেই প্রধান উপদেষ্টার উপর চাপ বাড়াল বিএনপি। গণতন্ত্র রক্ষায় ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে ভোটের দাবিতে সরব ভারত, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নও। সব মিলিয়ে ঘরে-বাইর প্রবল চাপে ইউনুস।
এই মুহূর্তে আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনার দলকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এই ইস্যুকে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপিও। গতকাল সোমবার এবিষয়ে কথা বলতে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির-সহ অন্যান্য নেতারা। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ তাঁরা বৈঠক করেন ইউনুসের সঙ্গে। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আলমগির বলেন, “দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দায় ইউনুস সরকার এড়াতে পারে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সার্বিক বিষয়ে দলের উদ্বেগের বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা বিএনপির দায়িত্ব। বিএনপি সেই দায়িত্ব পালন করেছে।”
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাহিনীর সামনেই একের পর এক ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট বিপন্ন হয়েছে। ফ্যাসিবাদীরা এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। আমরা বারবার বলে এসেছি, এ সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের আবারও তাগাদা দিয়েছি। তারা ন্যূনতম সংস্কারের ক্ষেত্রে আলোচনার পর দ্রুত নির্বাচন করার বিষয়ে বলেছেন। এছাড়া আমরা দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারেও কথা বলেছি। এ সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তারা কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছে।” জানা গিয়েছে এই বৈঠকে ইউনুস সরকারের বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্টে’র বিষয়টিও উঠেছে। বিএনপির নেতারা ইউনুস সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।
উল্লেখ্য, রাজনীতির ময়াদানে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আওয়ামি লিগ। দেশের টালমাটাল পরিস্থিতির জন্য ইউনুসের পদত্যাগ চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। গত ৫ তারিখ, বুধবার জানা যায়, দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তা দেবেন হাসিনা। সেই থেকেই নতুন করে উত্তেজনার সূত্রপাত হয় বাংলাদেশে।
সেদিন সন্ধ্যাতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ তারপরই মুজিবের ৩২ ধানমন্ডির বাড়িতে গিয়ে তাণ্ডব শুরু করে ‘বিপ্লবী’ ছাত্ররা। হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন জ্বালিয়ে তারা। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামি লিগের জন্মস্থান নামে খ্যাত বায়তুল আমান ভবনও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনাপ্রবাহের পরই ইউনুস সরকারের কাছে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানায় বিএনপি। নাহলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.