সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভোটমুখী বাংলাদেশে অব্যাহত রাজনৈতিক হিংসা। ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ সরকারকে উৎখাত করতে আতঙ্কই হাতিয়ার বিএনপি-জামাতের। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে বিএনপি-জামাতের বনধ-অবরোধে বিক্ষোভকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে যাত্রীবাহী বাস। বাদ যাচ্ছে না খাদ্য সরবরাহকারী যানবাহনও। বনধ-অবরোধ সফল করতে সকাল কিংবা বিকেল যে কোনও সময় বাসে ভাঙচুর করা হচ্ছে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার জেরে ঘটছে প্রাণহানিও। সোমবার ভোর ৫টায় উত্তরের জনপদ জেলা দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের সামনে একটি ভুট্টাবোঝাই ট্রাকে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। যদিও এই ঘটনায় হতাহতের খবর মেলেনি।
জানা গিয়েছে, বাসে আগুন লাগানোর অভিযোগে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে আড়াই হাজার পেট্রল বোমা-সহ বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত দুজনের নাম অপু মিয়া ওরফে আকাশ (১৯) ও ফয়সাল আহমেদ মেহেদী (২৬)। খবর মিলেছে, ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে প্রজাপতি পরিবহণের যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় বিএনপির শাখা সংগঠন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির-সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মজুমদারকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এদিন সকালের দিকে র্যাব ওই ব্যক্তিকে আটক করেন। আবদুল্লাহপুর থেকে মিরপুরগামী প্রজাপতি পরিবহণের একটি বাসে যাত্রী সেজে ওঠে দুই ব্যক্তি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পেরেছে, ধৃত মামুন নাশকতার উদ্দেশে মোটরবাইক থেকে হাফ লিটার পেট্রল নিয়ে ওই বাসটির পিছনের সিটে ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় র্যাব তাকে পাকড়াও করে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত এনিয়ে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৭৭টি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফার অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ছিল আজ সোমবার। গতকাল এই কর্মসূচির প্রথম দিনে সারা দেশে অন্তত পাঁচটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকাতেও তিনটি বাসে আগুন লাগানো হয়। এই ঘটনায় ১২ জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এবিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগকারীরা ছদ্মবেশে বা যাত্রী সেজে এই কাজগুলো করছে। তারা পুলিশের গতিবিধি নজরে রেখে ফাঁকা জায়গায় ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। এ কারণে বিষয়টি পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে খবর, ঢাকায় প্রতিদিন সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার বাস চলাচল করে। বাসে আগুন জ্বালিয়ে নাশকতা রুখতে রাজধানীর ৫০টি থানায় ৮ হাজারের মতো পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। আরও ৫ হাজার সদস্য তৃণমূল স্তরে সরাসরি কাজ করছেন। বাস সন্ত্রাসীদের নিশানায় থাকায় বিষয়টি নিয়ে বাস মালিকদের বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বাসের পক্ষ থেকে পিছনের আসনে একজন লোক রাখা হবে। এতে যাত্রী সেজে নাশকতার ঘটনাগুলো ঠেকানো যাবে। মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা জানিয়েছেন, ফাঁকা বাস ও থেমে থাকা বাসগুলোকে অগ্নিসংযোগকারীরা বেশি টার্গেট করছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের উত্তরের জনপদ জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে রবিবার গভীর রাতে শাসক দলের যুবলিগ নেতা জাহিদুল ইসলামকে (৩৮) কুপিয়ে ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। মৃত জাহিদুল উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামি যুবলিগের সভাপতি ছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.