ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট চায় না খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনকেই প্রাধান্য দিচ্ছে তারা। এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ প্রায় ধুয়ে গিয়েছে। এই সুযোগে মাথাচারা দিয়েছে জামাত। ইউনুসের সরকারের উপর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে পাকপন্থী দলটির। তাই ক্রমাগতই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের উপর চাপ বাড়াচ্ছ বিএনপি।
এই মুহূর্তে দেশে নেই খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য তিনি গিয়েছেন লন্ডনে। কিন্তু দলের চেয়ারপার্সনের অনুপস্থিতিতেও ভোটের দাবিতে সরব বিএনপি। জানা গিয়েছে, ভোট, ছাত্র আন্দোলন-সহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার-সহ আরও অনেকে। আলোচনার পর বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে তারা স্থানীয় নির্বাচন চায় না। কারণ জনগণ এটা মেনে নেবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। খালেদার দলের নেতারা মনে করেন, এই ঘোষণাপত্রে গত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের স্বীকৃতি থাকতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে এই সময়ে দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। নেতাদের দাবি, হঠাৎ করে নয়, বিএনপির গত ১৬ বছরের আন্দোলনের পটভূমিতে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফল নয়। কিন্তু বিএনপির সেই দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। এমন প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্রে গণতন্ত্রের জন্য দলের সংগ্রাম-ত্যাগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিও জোরালোভাবে তুলে ধরবে বিএনপি বলে জানা গিয়েছে। ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নেতাদের অভিমত, আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮। এটা নিয়ে বিতর্কের কোনও সুযোগ নেই। এমনটা করলে জটিলতা বাড়বে, নির্বাচন আয়োজনে কালক্ষেপণ হবে। ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছরই থাকা উচিত। বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি প্রসঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, সংবিধানের বাইরে গেলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে। বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন-সহ রাষ্ট্রের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। যারা এটা বাতিলের কথা বলছে, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সংবিধান কখনও কবর দেওয়া যায় না। পরিবর্ধন, পরিমার্জন বা সংশোধন হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংগঠন থাকলেও রাজনীতির ময়দানে সেই শক্তি নেই বিএনপির। কিন্তু হাসিনাহীন বাংলাদেশে এখন হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া খালেদা জিয়ার দল। তাই তারা চাইছে আগে জাতীয় নির্বাচন হোক। কারণ জামাত এর আগে ভোটে লড়লেও খুব বেশি আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। ইউনুসের এখন কোনও রাজনৈতিক দল নেই। ইউনুস সরকারও জানে হাসিনার দলকে টক্কর দেওয়ার মতো ক্ষমতা বিএনপিরই রয়েছে। তাই ঢাকার মসনদে বসলে স্থানীয় ভোটে সংগঠন আরও মজবুত করতে পারবে খালেদার দল। কারণ তা হলে জামাতের মৌলবাদীরা হাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। এছাড়া কোনও অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় নির্বাচন করাতে পারে কি না, এই প্রশ্নও একাধিকবার করেছে বিএনপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.