সুকুমার সরকার, ঢাকা: শেখ হাসিনাকে রুখতে ‘পাকপন্থী’ বিএনপির হাতিয়ার এবার মার্কিন ভিসা নীতি। ভোটমুখী বাংলাদেশে শাসক আওয়ামি লিগকে জব্দ করতে ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যে চলা চাপানউতোরেই মোক্ষম সুযোগ দেখছে খালেদা জিয়ার পাকিস্তানপন্থী দলটি।
সেই ২০০৯ সাল থেকেই নানা ইস্যু নিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার রূপকার প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের ফলাফল মূলত শূন্য। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তদারকি সরকারের অধীনে বঙ্গবন্ধুর গড়া দল আওয়ামি লিগ এবং প্রধান সেনাপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিএনপি-সহ অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৯ সালে দাবি করেও তদারকি সরকার ব্যবস্থ না পেয়ে বিএনপি দুটি নির্বাচনই বয়কট করে। এখনও একই দাবিতে আন্দালন করে যাচ্ছে খালেদার দল। কিন্তু ১৪ বছরেও সুবিধা করতে না পেরে এবার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে তুরুপের তাস হিসাবে গ্রহণ করে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। অর্থাৎ চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ অক্টোবর বর্তমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরও প্রবলভাবে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এ যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ভিসা নীতি প্রয়োগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তবে ভিসা নীতির প্রয়োগে বিএনপি-সহ বিরোধী দলের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে দলের নেতারা তেমন বিচলিত নন বলে তারা জানান। নেতারা বলছেন, বিরোধী দল মানে শুধু বিএনপি নয়। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পেয়ে হতাশ ছিলেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কয়েক দিন আগেও পরিস্থিতি উত্তরণের পথ খুঁজছিল দলটি। এবার ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু হওয়ায় প্রেক্ষাপট বদলাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে, দিল্লিতেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ, ফটোসেশনের ছবি ও সেলফি ভাইরালের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রয়োগের পদক্ষেপ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে ধারণা করছে বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে সরকারি ও বিরোধীদলের নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসন-সহ সর্বস্তরে এক ধরণের টানাপোড়েন চলছে। এরকম প্রেক্ষাপট চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে বিএনপি। এখন কীভাবে আন্দোলনে সফলতা পাওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভিতর আলোচনা চলছে।
আজ সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান। বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলন আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এর পরই আসবে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল। ঢাকা সফরে তাদের মনোভাব বোঝার বিষয়ও আছে। এসব বিষয় বুঝে অক্টোবরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে। চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে যে ধরণের রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে অক্টোবরের মাঝামাঝি সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করাই এখন বিএনপির লক্ষ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.