সুকুমার সরকার, ঢাকা: শুধু কি বাঙালি পান্তাপ্রিয়? মোটেই না৷ প্রতিবেশী দেশ ভুটানের মানুষজনও ইলিশ, পান্তার খোঁজ করে৷ এবারে ঢাকার পয়লা বৈশাখে সেই ছবিই দেখা গেল৷ চারদিনের সফরে বাংলাদেশে গিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং৷ তারই মাঝে পড়েছে পয়লা বৈশাখ৷ রবিবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন আপামর বাংলাদেশবাসীর মতোই তিনিও খেতে চাইলেন পান্তাভাত, ইলিশ ভাজা৷
রবিবার সকালে ঢাকাযর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তাঁর মুখে পান্তার কথা শুনে তো তাজ্জব উপস্থিত সকলে৷ তারপর নিজেই খুলে বললেন সবটা৷ লোটে শেরিং জানালেন, শিক্ষার্থী হিসেবে ১১ বছর তিনি বাংলাদেশে কাটিয়েছেন৷ তাই পান্তা, ইলিশের স্বাদ তাঁর জানা৷ বক্তব্যের শুরুতেই সবাইকে শুভকামনা জানিয়ে তিনি স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বললেন, “আমি মন থেকে সবাইকে শুভ নববর্ষ জানাচ্ছি। আপনারা সবাই পান্তাভাত খেয়েছেন তো?’’ জানালেন, ডাক্তারি পড়ার সময় বাংলাদেশে ছিলেন দীর্ঘদিন৷ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে পড়তেন তিনি৷ তাই পান্তাভাত আর ইলিশের সমঝদার তিনি৷ এদিন বর্ষবরণে এমন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ যেন দ্বিতীয় বাড়িতে ফেরা। এমন আনন্দের দিনে থাকতে পারছি, এটাই সবচেয়ে ভাল অনুভূতি৷’ এদিনের অনুষ্ঠানে ভুটান প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রবীন্দ্রসংগীত শোনালেন প্রখ্যাত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরি বন্যা৷ গান শোনানো হয় ভুটানি ভাষাতেও৷ উপহার হিসেবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সংকলন ‘গীতবিতান।’
এমবিবিএস পড়তে গিয়ে লোটে শেরিংয়ের সাতটি বছর কেটেছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে। পরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও চার বছর কেটেছে সার্জারিতে স্নাতকোত্তর করতে গিয়ে। চিকিৎসা থেকে রাজনীতিতে আসা শেরিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে গিয়ে রবিবার চলে যান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে৷ শিক্ষক, পড়ুয়া সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ভাল চিকিৎসক হতে গেলে, প্রথমে তাঁকে ভাল মানুষ হতে হবে। আমি রাজনীতিতে এসেছি আমার পেশাকে ছেড়ে নয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি চাকরি না করে, বিদেশে না গিয়ে আমি ভুটানের মানুষকে নিয়ে ভেবেছি। তাঁদের নিয়ে কাজ করেছি। আজ আমি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী।’
এদিন সকাল সোয়া ৬টায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’, এই সুর সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেরিয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাংলাদেশের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতোমধ্যেই ইউনেস্কোর তরফে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই বৈশাখের প্রথম দিন ঢাকার এই শোভাযাত্রা দেখতে ভিড়ও হয় বেশি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.