Advertisement
Advertisement

রোহিঙ্গাদের আদৌ ফেরানো হবে কি? প্রতিশ্রুতি চান কক্সবাজারের ভোটাররা

জাল ভোট দিতে পারে রোহিঙ্গারা, আশঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের।

Bangladeshis want Rohingyas out
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:December 26, 2018 5:38 pm
  • Updated:December 26, 2018 5:38 pm  

সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ায় এবার নির্বাচন হবে মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে। শাসকদল আওয়ামি লিগ এবং প্রধান বিরোধীদল বিএনপি প্রার্থীর সমর্থনে গণসংযোগ, সমাবেশ-সহ নির্বাচনী প্রচারে ঘুরে ফিরে রোহিঙ্গা ইস্যুতেই বক্তব্য আসছে। বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা এবং বিতর্কের কারণে এবার মনোনয়ন পাননি। তবে তাঁর স্ত্রী শাহীন আখতার আওয়ামি লিগের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর পক্ষে দলটির স্থানীয় একজন নেতা মহম্মদ শাহ আলম বলছিলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি সারা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে। এই বিষয়গুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সরকারের উদ্যোগের কথাও তারা ভোটারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন।

এটা ছোট ইস্যু নয়, অনেক বড় একটা ইস্যু। ১১ লাখের বেশি মানুষকে লালন করা সহজ কথা নয়। এই মানবিক বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরছি। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা তো সরকার করছে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার সেই চেষ্টা এগিয়ে নেবে। এই বিষয়টিও আমরা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছি। আর বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরির প্রতিশ্রুতির অগ্রাধিকারের তালিকাতেই আছে শরণার্থীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিষয়। দলের স্থানীয় নেতা সরওয়ার জাহান চৌধুরি বলেছেন, ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে না পেরে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এটাই তাদের মুল বক্তব্য। রোহিঙ্গা ও তাঁদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে কিন্তু একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এটি একটি অন্যতম ইস্যু হিসেবে তাঁরা নির্বাচনী ইস্তেহারে দিয়েছে স্থানীয়ভাবে।

Advertisement

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হিসেবে সামনে আসছে। একইসঙ্গে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর কারণে নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও এক ধরনের সংশয় রয়েছে। টেকনাফ এবং উখিয়া নিয়ে কক্সবাজার-৪ আসনে ২ লাখ ৬৪ হাজার ভোটার রয়েছে। গত বছরের আগস্টে যখন মায়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে আসতে থাকেন, তখন এলাকার মানুষ তাদের বাড়ির আঙিনায় এবং আশে পাশের এলাকায় অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্রয় দীর্ঘ সময় হওয়ায় এখন তাদের স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রার ওপর একটা চাপ তৈরি হয়েছে। সে কারণে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে প্রার্থী এবং দলগুলোর প্রতিশ্রুতির দিকে নজর দিয়েছে। রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে থাকলে এলাকার সমস্যা। টেকনাফ এবং উখিয়ায় স্থানীয় মানুষের সংখ্যা সাড়ে চার লাখের মতো হবে। তারাই এখন সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে।

[বাংলাদেশের সেনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আইএসআই, অভিযোগ লিগের ]

যদিও শরণার্থীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে টেকনাফ এবং উখিয়ায় ৩০টি শিবিরে রাখা হয়েছে। তারা শিবিরের বাইরে লোকালয়ে এসে সস্তায় শ্রম দিয়ে সেখানকার শ্রমবাজার দখল করে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্য-সহ সবক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের বড় অংশের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। টেকনাফে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা বেগম বলছিলেন, এই ইস্যুতে তারা দলগুলোর কাছে স্পষ্ট অঙ্গীকার চান। রোহিঙ্গাদের কারণে তাঁদের জীবনে অনেক বেশি প্রভাব পড়েছে। সেটা হচ্ছে, প্রথমে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গিয়েছে। গাড়িভাড়া-সহ সবখানেই কিন্তু অনেক প্রভাব পড়েছে। বক্তব্য হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় লোকজনের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তবে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কোন মতপার্তক্য নেই। তাদের আশ্রয় যে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যাচ্ছে, মায়ানমারে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি যে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এর প্রভাব নিয়েই স্থানীয় লোকজনের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের বিষয়ে বক্তব্য চান প্রার্থী এবং দলগুলোর কাছে। ভোটের দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা কোনও সমস্যা তৈরি করতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন। টেকনাফের সমাজসেবক অধ্যাপক মহম্মদ আলি সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচনে এদের দ্বারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও হতে পারে। অবনতি হতে পারে মানে, ভোটের দিনে এরা গোপনে জাল ভোট দিতে যেতে পারে। এরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও জড়িত হতে পারে কারণ এদের মাঝে সন্ত্রাসী গ্রুপও আছে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং সেখানে দায়িত্বপালনকারী সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কয়েকদফা বৈঠক করেছে। শিবিরগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে ভোটের আগে ও পরে রোহিঙ্গাদের শিবিরের বাইরে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ করেছে। রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মহম্মদ নুর বলছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা যাতে কোনওভাবে জড়িত না হয়, শিবিরগুলোর মসজিদে মসজিদে সেই বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। আওয়ামি লিগ, বিএনপির বাইরে অন্য দলগুলোর প্রচারেও রোহিঙ্গা ইস্যু অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

[বাংলাদেশে নির্বাচন চলাকালীন ‘গৃহবন্দি’ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা   ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement