সুকুমার সরকার, ঢাকা: ওড়িশার বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনায় (Orissa train accident) জখম দুই বাংলাদেশি। খবর নিশ্চিত করলেন কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের মুখপাত্র রঞ্জন সেন। জখম ব্যক্তিরা বাংলাদেশের (Bangladesh)উত্তরবঙ্গের দুটি জেলা রাজশাহী বিভাগীয় শহরের রাসেলুজ্জামান ও বগুড়ার হাবিবুর রহমান। রঞ্জন সেন জানান, ”শুক্রবার রাত থেকে হটলাইন সচল হওয়ার পর রাসেলের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি হটলাইনে জানিয়েছেন, রাসেল এখন ওড়িশার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাবিবুর রহমানের নাম পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অফিস নবান্নের তালিকা থেকে।” চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে ক্যানসার ও অন্যান্য চিকিৎসার জন্য ভেলোরের খ্রিস্টান মেডিক্যাল হাসপাতালের চিকিৎসা গ্রহণকারীদের সিংহভাগই বাংলাদেশের নাগরিক। কারণ, উন্নত চিকিৎসা ও স্বল্প ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশিদের কাছে ভেলোর হাসপাতালটি খুবই জনপ্রিয়।
উপ হাইকমিশনের মুখপাত্র (Spokesperson) রঞ্জন সেন জানান, উপ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এখনও আহত দুই ব্যক্তির বিষয়টি যাচাই করা যায়নি। ইতিমধ্যে উপ হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল ওড়িশার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তারা গেলে বাংলাদেশি আরও কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা, সেটি বিস্তারিত জানাতে পারব। ওই ট্রেনের এক বাংলাদেশি যাত্রী ঘটনাস্থল থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, তাঁর বগিতে সাত থেকে আটজন বাংলাদেশি ছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সুস্থ আছেন।
কলকাতা থেকে ওড়িশা (Orissa) হয়ে দক্ষিণ ভারতগামী অসংখ্য ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়ে গেছে বা অন্য রুটে চালানো হচ্ছে বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে জানিয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, উপ হাইকমিশন যে হটলাইন নম্বর দিয়েছে, তাতে ফোন করে অনেক সময় লাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে রঞ্জন সেন বলেন, ”ঘণ্টায় ৫০টির বেশি ফোন আসছে। সাধারণ লাইন ও হোয়াটসঅ্যাপ — দু’ভাবেই ফোন করা যাচ্ছে। সাধারণ নম্বর চলতে থাকলে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন ঢুকতে পারে না বা হোয়াটসঅ্যাপে একটি কল চলতে থাকলে অন্য কলটি ঢোকে না। এ কারণে হয়তো অনেক সময় ফোন করে পাওয়া যাচ্ছে না। লাইন সবসময় ব্যস্ত থাকছে। তবে মৃত মানুষদের মধ্যে এখনও কোনও বাংলাদেশি নাগরিকের নাম পাওয়া যায়নি। সরকারিভাবেও এখনও কোনও তথ্য কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনের হাতে আসেনি।”
এদিকে, ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন দেশের পশ্চিমের জেলা রানাঘাট মহকুমার বিপরীতে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার সামন্তা এলাকার মহম্মদ আক্তারুজ্জামান। তিনি ও তাঁর স্ত্রী দুর্ঘটনাকবলিত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন। আক্তারুজ্জামান মহেশপুর সরকারি পদ্মপুকুর শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী নূরজাহান একজন গৃহিণী। চিকিৎসার জন্য তাঁরা করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপে তামিলনাড়ুর ভেলরে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর শনিবার সকাল ৭টায় তাঁদের অপর একটি ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই ট্রেনে আরও অনেক বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন এই দম্পতি।
আক্তারুজ্জামান জানান, ”শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিকট শব্দ পেয়ে বুঝলাম সামনে কিছু একটা ঘটেছে। চেয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু হল না। শুধু কানে ভেসে এল চিৎকার-চেঁচামেচি। পিছনের কামরা থেকে নেমে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। সম্ভব হল না। আমাদের সরিয়ে নেওয়া হল, ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হল না। সরানোর সময় চোখে পড়ল নিহত-আহত ব্যক্তিদের নিয়ে ছোটাছুটি। বুঝলাম ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। হতাহত ব্যক্তিদের দেখে প্রচণ্ড ভয় পেলাম, বুঝে নিলাম বড় দুর্ঘটনা থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি।” মহেশপুরের সামন্তা এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, ”ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনে আক্তারুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এলাকার মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। পরে তাঁদের ভাল থাকার খবরে সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.