ফাঁকা পড়ে রয়েছে রমনার বটমূল
সুকুমার সরকার, ঢাকা: যতই ঝড় আসুক না কেন, উৎসবপ্রিয় বাঙালি তার থেকে অবস্থান থেকে সরতে চায় না। কিন্তু, এবার তাকে হার মানতে হয়েছে করোনা নামক মহামারির কাছে। তাই বলে অবশ্য হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই তারা। যতটা দূরত্ব বজায় রেখে পারা যায় সেই সীমিত পরিসরেই উদযাপন করছে নববর্ষ। গত ৫০০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এই রকম প্রাণহীন পয়লা বৈশাখ এসেছে বাঙালির জীবনে। একে অপরের সঙ্গে মিলনের দিনটাই আজ একলা হয়ে পড়েছে।
করোনা ভাইরাস (Corona Virus) -এর বিরুদ্ধে মানব সভ্যতা রক্ষার যুদ্ধে অংশ নিয়ে ঘরে থেকে নতুন বছরের সূর্যোদয় দেখছে তারা। ঘরে থাকার ফলে বাইরের অনেক আয়োজনকে চার দেয়ালের মধ্যে নিয়ে এসে বাংলাদেশের মানুষ আজ বরণ করছে নতুন বছরকে। বিগত বছরের গ্লানি, জরা, আবর্জনা ভাসিয়ে দিয়ে ঘরে থেকেও প্রাণের তানপুরায় মানুষ শুনছে বাঙালির বর্ষবরণের আবহমান সুরধ্বনি। বাতাসে কিংবা ইথারে ভেসে আসা কল্লোলে কণ্ঠ মিলিয়ে আজ বাঙালি গেয়ে উঠছে, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’ নতুন বছরের নতুন এই সূর্য বাঙালিকে দিচ্ছে দুঃসময়কে জয় করার দুরন্ত শক্তি। বিশেষ এক পরিস্থিতিতে এবার রমনার বটমূলে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষবরণের আয়োজন নেই, নেই রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
কিন্তু, ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা নববর্ষের নানা আয়োজনে এবারও উৎসবের সুরধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে। ছায়ানট এক ফেসবুক বার্তায় জানিয়েছে, এবার করোনা পরিস্থিতিতে ‘নতুন বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানানো জীবনযুদ্ধে জয়ের শপথ।’ নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসমাবেশ করে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নববর্ষকে ডিজিটালি স্বাগত জানানোর যে আহ্বান রেখেছেন। তাতে সাড়া দিয়ে সকাল সাতটায় সরকারি টেলিভিশনের ছায়ানট এবার ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’ এই অঙ্গীকার নিয়ে সীমিত আকারে অনুষ্ঠান করেছে।
এছাড়াও এই অনুষ্ঠান দেখা গিয়েছে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও। গত শনিবার ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন একটি বিবৃতিতে জানান, ‘পাকিস্তানি আমলের বৈরী পরিবেশে বাঙালির আপন সত্তার স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আর মানবকল্যাণের ব্রত নিয়ে ১৯৬১ সালে ছায়ানটের জন্ম। লক্ষ্য অর্জনে ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতিবছর রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের ভোরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আসছে এই সংগঠন। ১৯৭১ সালে দেশকে শত্রুমুক্ত করার সশস্ত্র সংগ্রামের সময় ছাড়া আর কখনও বন্ধ হয়নি রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখ উদযাপন। প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণজনিত দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় ভিন্ন আঙ্গিকে, ডিজিটাল মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে প্রথম বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। বাঙালির নববর্ষের এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ইউনেস্কো বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার পোস্টারটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘুরবে সারাদেশে, সারাবিশ্বে। শোভা পাবে রাজধানীর দেয়ালেও। দিনটি বাংলার কৃষকের, তাঁতশিল্পীর, কর্মকারের, মৃৎশিল্পীর, বাঁশ-বেতসহ বিচিত্র রকম কুটির শিল্পীর ও লোকশিল্পীর। ধনী ও দরিদ্র-সহ সব শ্রেণি এবং পেশার মানুষের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.