সুকুমার সরকার, ঢাকা: করোনা মহামারীর পর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর তাণ্ডব। ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৫। ডেঙ্গু আক্রান্তদের নতুন কিছু উপসর্গের জেরে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে বলে খবর। এহেন পরিস্থি্তিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার জরুরি অবস্থা জারি কিংবা মহামারী ঘোষণার কথা বললেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা উড়িয়ে দিচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৭ হাজার ৫৪৭ জন। ইতিমধ্যে রোগমুক্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৪৫৫। ঢাকা সিটিতে ১২১ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু এখন আর শুধু রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই, ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলেও। গত ইদুল ফিতরের সময় ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে ইদ পালন করতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সারা দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৭৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। বুধবার মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের উপসর্গে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হওয়ায় মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। অর্থাৎ ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে মৃত্যু, বাড়ছে রোগী। এই পটভূমিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার জরুরি অবস্থা জারি কিংবা মহামারী ঘোষণার কথা বললেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা উড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গুর এমন আগ্রাসী পরিস্থিতির জন্য দায়ী স্থানীয় প্রশাসন মন্ত্রক ও স্বাস্থ্য বিভাগের অদূরদর্শিতা এবং অব্যবস্থা। তাঁরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নগরে সিটি কর্পোরেশন চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকা, মশা নিধনে দীর্ঘমেয়াদি কর্ম পরিকল্পনার অভাব, এডিস মশার বিস্তার ও রোগি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য এই রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে ৫ হাজার ৯৩৭ জন ডেঙ্গু রোগি হাসপাতালে ভরতি। এর মধ্যে ঢাকাতেই ৩ হাজার ৫২২ জন, আর বাকি ২ হাজার ৪১৫ জন ঢাকার বাইরে। গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন। এর মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন ২১ হাজার ৪৫৫ জন। জুলাইয়ের শুরু থেকে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই মাসের ২০ দিনে ১৯ হাজার ৫৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। নতুন ধরণের কারণে উপসর্গ ছাড়া অনেকেই আক্রান্ত হয়ে হালকা অসুস্থতাবোধ করছেন। তবে প্রায়ই এই ভাইরাসে সৃষ্ট জ্বর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (ইসিডিসি) তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.