সুকুমার সরকার, ঢাকা: “শেখ হাসিনাকে আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব। শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১৫ বছরের সব অপকর্মের বিচার করা হবে।” অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
ভাষণের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের শহিদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করে ড. ইউনুস বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করলাম। আপনারা জানেন কী কঠিন এক পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান পালিয়ে গেলে দেশ সরকার-শূন্য হয় সাময়িকভাবে। পুলিশ প্রশাসনও এ সময় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে উদ্বেগজনক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে আমরা সবাই মিলে পুনর্গঠন করছি।”
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত ও আহতের পরিসংখ্যান দেন ইউনুস। জানান, বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক-জনতা শহিদ হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৩১। প্রতিদিনই তালিকায় নতুন নতুন শহিদের নাম যোগ হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রতিশ্রুতি দেন, “প্রতিটি হত্যার বিচার করব।” এর পরেই হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায়, “জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব। কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি।”
ইউনুস জানান কমিশন প্রধান তাঁকে জানিয়েছেন, অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। অনেকে কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন। দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনে অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানান ইউনুস। এই ধরনের অপরাধ রুখতে এবং মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার, তাও বিস্তারিত জানান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। যদিও এদিনের ভাষণে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কীভাবে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে সক্ষম হবে ইউনুস সরকার? দ্বিতীয় প্রশ্ন, হাসিনাকে দিল্লিতেই আছেন, নাকি অন্য কোথাও!
প্রসঙ্গত, ‘পুঁজিবাদী সংবিধান’ বদলের দাবি উঠেছে বাংলাদেশে। সংবিধানকে সর্বসাধারণের ভাষায় লেখারও দাবি উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সম্মেলনে। এর আগে বৃহস্পতিবার মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান সংবিধান সংক্রান্ত মামলায় বাংলাদেশ হাই কোর্টে দাবি করেছেন দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলিম। অতএব, বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির কোনও প্রয়োজন নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.