সুকুমার সরকার, ঢাকা: আসন্ন দুর্গাপুজো উপলক্ষে ভারতে আরও আড়াই হাজার মেট্রিক টন ইলিশ (Hilsa) রপ্তানির অনুমোদন দিল বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রক বৃহস্পতিবার এই অনুমোদন দিয়েছে। ভারতে এই ২ হাজার ৫২০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে সেখানকার ৬৩টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান ৪০ টন করে এই ইলিশ রপ্তানি করবে। কেউই অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে না। এমনই নির্দেশিকা জারি হয়েছে সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে।
এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021) উপলক্ষে ভারতে ২০৮০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয় হাসিনা প্রশাসন। ৫০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম চালানের ইলিশ গত ২১ সেপ্টেম্বর ভারতে পৌঁছেছে। দুর্গাপুজোয় বাংলাকে বড় উপহার হিসেবে ইলিশ পাঠাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) । অনেকদিন ধরে পদ্মার ইলিশের দাবি জানাচ্ছিলেন মৎস্যপ্রেমী বঙ্গবাসী। তাঁদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে এবার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ধাপে ধাপে দু’হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি ইলিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে (Bangladesh) যে ইলিশ মিলেছে, তার চেয়ে এবার একটু ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বারোশ টাকারও বেশি দামে। যা অন্যান্য বছর ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা প্রতি কেজিতে মিলত। এবার ঢাকার বাজারে আগের মতো ইলিশে ছয়লাপ নেই। তারপরও এ বছর সেই আক্ষেপ মিটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গবাসীর। শেখ হাসিনা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, দুর্গাপুজোর আগেই বাংলার জন্য ২০৮০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানো হবে। ১০ অক্টোবরের মধ্যে তা এসে পৌঁছাবে রাজ্যে। ব্যবসায়ীদের অনুমান, পেট্রাপোল-বেনাপোল এবং অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ইলিশ ঢোকার পর দ্রুতই তা বাজারে বিক্রি হয়ে যাবে। সকলেই চাইবেন, পদ্মার ইলিশের স্বাদ পেতে।
বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকালকে ইলিশের মরশুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময়েই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে এবং বাজারে বেশ ভাল পরিমাণে পাওয়াও যায়। সে হিসেবে চলতি বছর এরই মধ্যে বর্ষাকাল পেরিয়ে এখন শরৎ চলছে। এই সময়ে বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ থাকার কথা সেটি দেখা যাচ্ছে না। সেই সাথে যারা ইলিশ ধরার সাথে যুক্ত তারাও বলছেন যে, সাগরে ইলিশ তেমন ধরা পড়ছে না। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ইলিশ মাছ ধরতে গিয়ে ফিরে আসা জেলেরাও অভিযোগ করেছেন যে, এ বছর ইলিশ ধরা পড়ছে না জালে। চট্টগ্রামের ইলিশেরও তেমন একটা স্বাদ নেই। নোয়াখালি জেলার মহেশখালি, হাতিয়ায় কিছু ইলিশ মিলছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা শামিম আহমদ জানান, গত বছর এই সময়ে সীতাকুণ্ড উপকূলে মোট ইলিশ ধরা পড়েছিল ৪৭১.৫ মেট্রিক টন। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত সেখানে ইলিশ ধরা পড়েছে মাত্র দেড়শ মেট্রিক টনের মতো। আহমদ জানান, তাঁরা জেলে এবং অন্যান্য মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলেও সম্প্রতি ইলিশ মাছ ধরা না পড়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “পদ্মা-মেঘনা-যমুনার যে ফ্লো, সেটা আগের মতো নাই আসলে। যার কারণে মাছ সাগর থেকে মিঠা পানিতে বা নদীতে কম প্রবেশ করছে।”
এছাড়া পূর্ণিমার সময় যখন জোয়ার বেশি থাকে তখন ইলিশ মাছ বেশি ধরা পড়ে বলে জানান আহমদ। তবে সম্প্রতি জোয়ারের সময়ও জলের উচ্চতা গত বছরের মতো বাড়ছে না।কারণ, বাংলাদেশে জল দূষণ এবং নদীতে নাব্যতার সংকটও রয়েছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও এখনও ইলিশের ‘মাইগ্রেশন রুট’ বা অভিবাসনের যে চলাচল পথ, তা এখনও ট্র্যাকে আছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.