সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রত্যেক বছর ধুমধাম করে দুর্গাপুজো পালিত হয় বাংলাদেশে। কিন্তু এই বছরটা অন্যরকম। আগস্ট মাসে বড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে পদ্মাপারে। গণঅভ্যুত্থানের জেরে পদচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। পতন ঘটেছে আওয়ামি লিগ সরকারের। তার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্তে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। মনে ভয়ে, আশঙ্কা, উদ্বেগ নিয়েই চলছে পুজোর প্রস্তুতি। এর মাঝেই টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে একধিক মন্দির কমিটিগুলোর কাছে। টাকা না দিলে নাকি পুজো বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে! এই ঘটনায় হিন্দুদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আসন্ন দুর্গাপুজো উপলক্ষে দেশের দক্ষিণের জেলা খুলনার দাকোপ উপজেলার ৫টি মন্দিরে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়ে উড়ো চিঠি পাঠানো হয় গত বুধবার। মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এই চিঠি আসে। দাকোপের একাধিক মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, চিঠি পাওয়ার পর তাঁরা রাতে এলাকার মানুষকে নিয়ে সভা করেছিলেন। এখন থেকেই এলাকায় প্রতিদিন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। চাঁদা চেয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই চিঠি কম্পিউটারে কম্পোজ করা। সব কটি চিঠির বক্তব্য এক। হলুদ খামের উপর মন্দির কমিটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, একটি চিঠির এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হানিফের প্রজেক্টে যেমন করেছি, তোদের পরিণতিও তেমন হবে’। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামি লিগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চিংড়িঘেরে ব্যাপক লুটপাট করে কয়েক কোটি টাকার চিংড়ি ও মাছ বিক্রি করে দেওয়া হয়। দাকোপ থানার ওসি জানান, “ওই উড়ো চিঠির বিষয়ে চারটি মন্দির থেকে জিডি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। আমাদের পক্ষ থেকে মন্দির সুরক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর টিমসহ থানা থেকে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে।” বাংলাদেশে পুজো উদযাপন পরিষদের খুলনা জেলা শাখার সভাপতি কৃষ্ণপদ দাস বলেন, অবশ্যই অসৎ উদ্দেশ্যে এই কাজ করা হয়েছে। জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করা হয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মহম্মদ ময়নুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ পুজো উদযাপন করছেন। পুজোয় নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই। সকলে নিশ্চিন্তে পুজো করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, জঙ্গি হামলারও কোনও আশঙ্কা নেই। তার পরেও পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে। নিরাপত্তায় কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। পুজোর সময় কোথাও কোনও ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে অত্যাচারের খাঁড়া নেমে আসে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর। বিশেষ করে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর, সম্পত্তি সব কিছুতে হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু হিন্দু মন্দিরও। ফলে সন্ত্রাসের আবহেই শুরু হয় পুজো প্রস্তুতি। চলছে প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল গড়ার কাজ। ইতিমধ্যে নমাজ আর আজানের সময়ে দুর্গাপুজোর গানবাজনা বন্ধ রাখতে হিন্দুদের অনুরোধ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে শান্তিতে পুজো উদযাপন করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে কীভাবে নির্বিঘ্নে দুর্গাপুজো সম্পন্ন হয়, সেদিকে নজর রাখবে ভারতও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.