ঢাকার রাস্তায় পড়ুয়াদের মিছিল
সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারতের হায়দরাবাদে ২৭ বছর বয়সী এক পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করার পর গলা টিপে খুন করা হয়। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তাঁর দেহটিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটির সঙ্গেও। তবে শুধুমাত্র বুদ্ধির জোরে নিজের জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি।
এপ্রসঙ্গে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, ধর্ষক ( rapist) বারবার তাঁর পরিচয় জানতে চাইছিলেন। কিন্তু, মেয়েটির মনে হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পরিচয় পেলে তাঁকে মেরে ফেলা হতে পারে। তাই তিনি মুখ খোলেনি। ঘটনাস্থল দেখে পুলিশও বলছে, নিজেকে বাঁচাতে প্রবল চেষ্টা করেছেন ওই ছাত্রী। পাশাপাশি ওই স্থানে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. সাদেকা হালিমের কাছ থেকেও।
ধর্ষিতার কথায়, রবিবার সন্ধে সাতটায় কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পর শেওড়ার দিকে হাঁটছিলেন তিনি। তখনই ঘটনা ঘটে। ঠিক কতক্ষণ তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন তা বলতে পারেননি। তবে জ্ঞান ফিরে আসার পর বুঝতে পারেন, ঘণ্টাদুয়েক পার হয়েছে। আর ধর্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। ওই লোকটা খুব শক্তিশালী ছিল। চেষ্টা করে তাকে বাধা দিতে পারেননি মেয়েটা।
ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘মেয়েটির সামনে পরীক্ষা। স্টাডি সার্কেলে পড়াশোনা করে শিক্ষার্থীরা। সেই কারণেই বান্ধবীর বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলে মেয়েটি। তাঁর সঙ্গে বাড়তি পোশাক, পড়ালেখার বইখাতা আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ছিল। মেয়েটির বর্ণনা অনুযায়ী, ধর্ষক একজনই ছিল। তাকে দেখতে সিরিয়াল কিলারের মতো মনে হয়েছে। ঠান্ডা মাথায় মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। মেয়েটিকে জোর করে পোশাক পরিবর্তন করিয়ে ফের ধর্ষণ করেছে। আমি ছাত্রীটির মুখে পুরো ঘটনার বিবরণ শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, মেয়েটি আমারই মেয়ে। কী প্রচণ্ড ব্যথা সহ্য করছে! তবে এখন ওর সম্পূর্ণ বিশ্রাম দরকার। সেই সঙ্গে মানসিক সহযোগিতাও প্রয়োজন। এখন মা ও বাবা ওর পাশে এসে গিয়েছেন। শিক্ষকরাও আছেন। সবাই আন্তরিকতা নিয়ে বিষয়টি দেখছেন। এটা ইতিবাচক। মেয়েটি বেঁচে আছে অনেক ব্যথা নিয়ে। অসম্ভব মানসিক শক্তি ছিল বলেই প্রায় তিন ঘণ্টা পর ওখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে। ধর্ষকের চেহারার বিষয়েও পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছে।’
এদিকে এই ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকেই উত্তাল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মঙ্গলবারও ধর্ষকের চরম শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। দোষীদের গ্রেপ্তার ও কড়া শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও হুমকি দেয়। ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল ও রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদী গান-কবিতায় সমাবেশ এবং মোমবাতি মিছিল নিয়ে শহিদ মিনারে অবস্থান করতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.