সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘ইতিহাস বিজয়ীরাই রচনা করে।’ এই প্রবাদ বাক্যই যেন মিলে যাচ্ছে ‘নতুন’ বাংলাদেশে। সভ্যতার ইতিহাসে বার বার দেখা গিয়েছে, ক্ষমতা যার হাতে সে নিজের অনুকুলে তা রচনা করে। তারই প্রতিফলন যেন পড়শি দেশে ঘটছে। প্রস্তাব আগেই দেওয়া হয়েছিল। এবার নতুন করে নোট ছাপছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। আর তাতে নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। বদলে থাকছে জুলাইয়ের সেই ছাত্র আন্দোলনের ছবি। যার জেরে প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান শেখ হাসিনা। তার পর থেকেই ক্রমে পাঠ্যবই, হাসপাতাল, রাষ্ট্রপতি ভবন সব জায়গা থেকে সরেছে মুজিব ও হাসিনার ছবি। এবার পালা সেদেশের মুদ্রার। প্রশ্ন উঠছে, এভাবেই কি বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার?
আগস্ট মাসে হাসিনা গদিচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর থেকেই টাকার উপর থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে ফেলার দাবি তোলা হচ্ছিল। গত অক্টোবর মাসেই মুজিবের সরিয়ে নতুন নোট ছাপানোর উদ্যোগ নেয় ইউনুস সরকার। এবার তারই বাস্তবায়ন হচ্ছে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক নতুন ছাপার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু তাতে মুজিবের বদলে রয়েছে জুলাই আন্দোলনের ছবি। এনিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাড়াই ২০, ১০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট ছাপা হচ্ছে। ধর্মীয় কাঠামো, বাঙালি ঐতিহ্য এবং জুলাই বিদ্রোহের সময় আঁকা গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে মুদ্রায়। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের নির্বাহী পরিচালক হাসনারা শিখা জানিয়েছেন, “আমি আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন নোট বাজারে ছাড়া হবে।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবি বহুদিনের। কিন্তু চলতি বছরে সেই দাবি তীব্র হয়। জুলাই মাস থেকে এনিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। যার ঝাঁজ ক্রমেই বাড়তে থাকতে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি কোটা নিয়ে তৎকালীন হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চরমে ওঠে। শুরু হয় রক্তপাত। পরিস্থিতি মুজিবকন্যার হাতের বাইরে চলে যায়। অবশেষে গত ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা। ৮ আগস্ট শপথ নেয় ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার।
তার পর থেকে জামাতের মতো মৌলবাদী দল থেকে শুরু করে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সকলেই বিভিন্ন জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধু ও হাসিনার ছবি বা প্রতিকৃতি সরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। সেই মতোই পদক্ষেপ করে ইউনুস সরকার। হাসিনার নাম সরিয়ে ঢাকা-সহ নানা জায়গার একাধিক হাসপাতালের নতুন নামকরণ করা হয়। পাঠ্যবই থেকেও মুজিব ও বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও লেখা সরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে এভাবেই এক এক করে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসই মুছে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ভারতেরও। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.