ফাইল ফটো
সুকুমার সরকার, ঢাকা: আন্তর্জাতিক চাপ উড়িয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে পাঠানোর কাজ দ্রুত গতিতে চালাচ্ছে বাংলাদশ সরকার। মঙ্গলবার সকাল সোয়া নয়টার নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। নৌবাহিনীর জাহাজগুলি চট্টগ্রাম বোট ক্লাব থেকে যাত্রা করে।
জানা গিয়েছে, রোহিঙ্গা (Rohingya) শরণার্থীদের এই দ্বিতীয় দলে ৪২৭টি পরিবারের ১ হাজার ৭৭২ জন নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গতকাল সোমবার কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবির থেকে চট্টগ্রাম রওনা হয় এই রোহিঙ্গারা। তাঁদের নিয়ে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩৭টি বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সরকারি সূত্রে খবর, ভাসানচরে প্রত্যেকটি পরিবার পৃথক বাড়ি পেয়েছে। ঘর পেয়ে রীতিমতো আনন্দ ও সন্তোষ প্রকাশ করেছে শরণার্থীরা। কেননা, তাদের নতুন বাসস্থান ও সুযোগ-সুবিধা কক্সবাজার থেকে অনেক উন্নতমানের। তবে এরআগে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে কিছু পক্ষ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসব কারণ উল্লেখ করে বিরুদ্ধাচরণ করে আসছিল, তা যে ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত ছিল সেটি ভাসানচরে প্রথম দলে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের এক আধিকারিক বলেন, আশা করি বাকি এক লক্ষ রোহিঙ্গাও দ্রুত ভাসানচরে স্থানান্তরিত হবে। কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এখনও অযৌক্তিক অজুহাত তুলে স্থানান্তরে বাঁধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে, যা কোনও বিচারেই বাঞ্ছনীয় নয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগ থেকে প্রায় চার লক্ষ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছিল। তারপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন সাত-আট লক্ষ অসহায় মানুষ স্রোতের মতো আসতে থাকায় তখনই তাদের আবাসস্থল-সহ অন্যান্য ব্যবস্থাদি যে রকম করার প্রয়োজন ছিল তাৎক্ষণিকভাবে সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই ক্যাম্পের ভিতরে এখন বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ঢুকেছে, অবাধে মাদক ও নারী পাচারের মতো চরম সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সুতরাং শুধু বাংলাদেশের (Bangladesh) স্বার্থে নয়, রোহিঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত লোকজনের কল্যাণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে ভাসানচরে তারা গেলে সেটির বিরুদ্ধে কেন প্রপাগান্ডা ও বাঁধার সৃষ্টি করা উচিত নয় বলেই মনে করছে হাসিনা প্রশাসন। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে এক লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে উন্নতমানের আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রত্যেক পরিবারের জন্য আলাদা ঘর, আধুনিক সেনিটারি পদ্ধতি, বিশুদ্ধ খাবার জল, স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য হাসপাতালে ও ক্লিনিং এবং বাচ্চাদের শিক্ষাদানের জন্য সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, মিডিয়ার কল্যাণে এর সবকিছু সবাই দেখেছেন। ভাসানচরে ক্যাম্পের ভিতরে কক্সবাজারের মতো নিরাপত্তা সমস্যার উদ্ভব যাতে না ঘটে তার জন্য শতভাগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। কক্সবাজারের মতো সব ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম ভাসানচরেও বহাল থাকবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.