সুকুমার সরকার, ঢাকা: কিশোরী বা যুবতীকে ধর্ষণের ঘটনা তো ছিলই। কিন্তু, হালে শিশু ধর্ষণের ঘটনা দ্রুতহারে বাড়ছে বাংলাদেশে। গত দু’মাসে ৩৯৯টি শিশুকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায়। গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকাতেই সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনা ঘটেছে। যা প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে দেশজুড়ে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ছোটবেলা যেখানে কেটেছে। সেই ওয়ারির বনগ্রামের এক স্কুলছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর গলায় দড়ি পেঁচিয়ে খুন করা হয় শুক্রবার। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে একই স্কুলের পড়ুয়া হারুণ। পুলিশের জেরায় সে জানিয়েছে, ছাদ ঘুরে দেখানোর কথা বলে শিশুটিকে সবার চোখের আড়ালে নিয়ে যায়। তারপর তাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করে। অন্যদিকে, শুক্রবার বিকেলেই নেত্রকোনা জেলার দুই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৩৯৯ জন শিশু, নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে দাবি বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-র। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন নির্যাতনের জেরে একটি ছেলে-সহ মোট ১৬ জন শিশু মারা গিয়েছে। বাংলাদেশের ছটি দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এই তথ্য পেয়েছে বলে দাবি করেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে অন্তত ৪৯টি শিশু (৪৭ জন মেয়ে ও দু’জন ছেলে) যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ৩৫৬টি শিশু এই নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। এর মধ্যে মারা গিয়েছিল ২২ জন এবং জখম হয়েছিল ৩৩৪ জন।
শিশু নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে এই বিষয়ে অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও যুবসমাজকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। শিশু নির্যাতনের ঘটনা রুখতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরি। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে নির্যাতিত শিশুকে হত্যাও করা হচ্ছে। দুটো কিন্তু আলাদা বিষয়। ১৯৯৮ সালে যৌন নির্যাতন ঘটনা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন তার থেকেও বেশি হচ্ছে। আগের তুলনায় হিংসাত্মক ঘটনা বেশি হচ্ছে, এই সংক্রান্ত খবরও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এখন অনেক অভিভাবক পুলিশের কাছে যাচ্ছে। সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে উঠছে। এর ফলে অনেক সময় নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শিশুটিকে হত্যা করছে ধর্ষক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.