সুকুমার সরকার, ঢাকা: টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম পাঁচদিনের সরকারি সফরে চিন গেলেন আওয়ামি লিগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলার ফ্লাইটে করে সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। আর চিনের স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ১০ মিনিট)-এ ডালিয়ানের ঝৌশুইজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। তারপর শোভাযাত্রা সহকারে তাঁকে শাংগ্রিলা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ডালিয়ানে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় অংশ নেওয়ার সময় এই হোটেলেই থাকবে শেখ হাসিনা। সোমবার রাতে ঝৌশইজি বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান চিনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম, ডালিয়ান শহরের মেয়র তান চেংসু।
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের আমন্ত্রণে চিন সফরে গিয়েছেন হাসিনা। সেখানে চিনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি এই সফরে দু’দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘সামার ডাভোস’ নামে পরিচিত ডালিয়ানের এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, শিক্ষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রের প্রায় দু’হাজার প্রতিনিধি অংশ নেবেন। বাংলাদেশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখ হাসিনার এবারের সফর গতবারের বেজিং সফরের চেয়ে আলাদা। ওই সফরে মূলত বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এবার রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগামী ৪ জুলাই চিনের প্রধানমন্ত্রী লি চেচিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি তুলবেন শেখ হাসিনা।”
২০১৭ সালের আগস্টে মায়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে শুরু করে বাংলাদেশে। এরপর থেকেই এই সংকট সমাধানে দীর্ঘদিনের মিত্র চিনের শরণ নেওয়ার পরামর্শ আসছিল বাংলাদেশের কাছে। এবার সেই বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। প্রথমে ডালিয়ানে ‘ডাবলুইএফ অ্যানুয়াল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস-২০১৯’ বা সামার দাভোস-এ অংশ নেবেন। তারপর বুধবার বেজিংয়ে যাবেন শেখ হাসিনা। ওইদিন বিকেলে বেজিংয়ে বাংলাদেশিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন তিনি। পরেরদিন সকালে গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ থাকা বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর চিনের প্রধানমন্ত্রী লি চেচিয়াংয়ে সঙ্গে বৈঠক করে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
৫ জুলাই সকালে চিনা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘পাঙ্গোয়াল ইনস্টিটিউশন’-র একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে হাসিনার। সেখানে বিভিন্ন চিনা কোম্পানির সিইও শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গিয়েছে। এরপর চিনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি জান শু-র সঙ্গে বৈঠক হবে তাঁর। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে শি জিনপিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে তাঁকেই বিবেচনা হয়। বিকেলে শেখ হাসিনা চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দিয়াওইয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় বৈঠক করবেন। তারপর তাঁর সম্মানে দেওয়া চিনা প্রেসিডেন্টের ভোজসভাতেও অংশ নেবেন। আর পরেরদিন ৬ জুলাই রওনা দেবেন বাংলাদেশের উদ্দেশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.