সুকুমার সরকার. ঢাকা: বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকা। প্রবল হাওয়ার সঙ্গে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া দপ্তর। বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দ্বীপ ও উপকূলবর্তী এলাকা থেকে অনেকেই অন্য যায়গায় সরে গিয়েছেন। বিপদ সংকেত শোনা যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, ক্রমেই বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে মোকা। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে। কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। শুক্রবার আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আতঙ্কে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। শুক্রবার সকাল থেকে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে আশ্রয় নেন দ্বীপের পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা সংকেত জারি হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে চলে গিয়েছেন, পাঁচ শতাধিক মানুষ। আমি নিজেও টেকনাফে রয়েছি। সার্ভিস বোট, ফিশিং বোটসহ বিভিন্ন নৌযানের মাধ্যমে দ্বীপের বাসিন্দারা নিরাপদে চলে গিয়েছেন।”
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগে স্থানীয়দের জন্য সরকারি-বেসরকারি ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র-সহ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও ডাকবাংলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ জোন হিসেবে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপের জন্য নৌবাহিনী-সহ বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, মেডিক্যাল টিমসহ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলার সব সরকারি আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। জেলা সদর ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৯ উপজেলায় ৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েকশো স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে প্রথমেই দেশের উপকূলের খুলনা-সাতক্ষীরা ও বরিশাল বিভাগের কথা উঠে আসে। কারণ, গত দেড় দশকে সব কটি ঘূর্ণিঝড় প্রথমে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বরিশাল উপকূলে আঘাত হেনেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ এবার পুরোন পথ বাদ দিয়ে কক্সবাজার ও মায়ানমার উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। আর ওই এলাকা শুধু ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতির কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনটা নয়। অতিবৃষ্টিতেও সেখানে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় শিবিরগুলোয় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা (Rohingya) বসবাস করে, সেখানে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ, রোহিঙ্গাদের বসতি এলাকাগুলো মূলত পাহাড়ের মধ্যে। আর ওই পাহাড়গুলির মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি। ফলে ভারী বৃষ্টিতে সেখানে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও সবচেয়ে বেশি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.