সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে জাতিগত হিংসার শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মাতৃভূমিতে ফেরাতে চায় হাসিনা সরকার। দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ‘কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না, যুদ্ধ করতে চাই না। সবার সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ চাই। আমাদের সেইমতো প্রস্তুত থাকতে হবে।’ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী একথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু মায়ানমার আমাদের প্রতিবেশী, তাদের সঙ্গে কখনও সংঘাতে যাব না। বরং আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকদের যেন তারা ফিরিয়ে নিয়ে যায়, সেই প্রচেষ্টাই অব্যাহত থাকবে৷মানবিক কারণেই আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। মায়ানমারের সঙ্গে আমরা ঝগড়া বাঁধাতে যাইনি। আমরা আলোচনা করেছি,চুক্তি সম্পন্ন করেছি। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোই আমাদের লক্ষ্য।’ ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের শরণার্থীদের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নিজেদেরও এই অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৭১ সালে ১ কোটি মানুষ শরণার্থী ছিল। স্বাধীনতার পর তাদের অনেককেই পুনর্বাসন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শান্তিপূর্ণভাবে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা এবং ভারত-মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যা সমাধানের কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ সামসুল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত-সহ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ,প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া-সহ সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে এই মুহূর্তে খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ৷ কক্সবাজারের স্থানীয়দের মধ্যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে ‘বিশ্ব খাদ্য সংকট প্রতিবেদন ২০১৯’ এর তালিকায় স্পষ্ট চিহ্নিত হয়েছে৷ বাংলাদেশ হঠাৎ খাদ্য নিরাপত্তাহীন দেশের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পেছনে রোহিঙ্গাদের চাপই একমাত্র কারণ বলে জানিয়েছে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অ্যাগেইন্সট ফুড ক্রাইসিস নামের সংস্থার সমীক্ষা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কক্সবাজার বাংলাদেশের দরিদ্রতম জেলাগুলোর একটি। রোহিঙ্গাদের কারণে এখন বিপাকে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দা৷ বর্তমানে রোহিঙ্গাদের তুলনায় স্থানীয়রাই বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীন।’ কক্সবাজারের ১৫ লক্ষ মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়, স্থানীয় ও রোহিঙ্গা মিলে জেলার ১৩ লক্ষ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে, যাদের খাদ্য সহযোগিতা প্রয়োজন। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা এশীয় অঞ্চলের বাকি তিনটি দেশ – মায়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.