সুকুমার সরকার, ঢাকা: খালি হাতে নয়, যেনতেন প্রকারেণ এবার তিস্তার (Teesta) জল নিয়ে পাকা চুক্তি করেই ভারত থেকে ফেরাকে পাখির চোখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। আগামী ৫ তারিখ চারদিনের সফরে ভারতে আসছেন তিনি। একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা এই সফরে। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, অভিন্ন নদীর জলবণ্টনে সহযোগিতা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতের মতো বিষয়গুলি অগ্রাধিকার। গত এক দশকে দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্কে ‘বিশেষ মাত্রা’ বজায় রেখে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক এই তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের ভারত সফরের সূচি খানিকটা এরকম –
৫ সেপ্টেম্বর – নয়াদিল্লি পৌঁছবেন হাসিনা।
৬ সেপ্টেম্বর – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) সঙ্গে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে শীর্ষ বৈঠক। দু’দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা শেষে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি।
ঢাকার (Dhaka) কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যৌথপর্যায়ের নদী সংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর জলবণ্টন নিয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালে গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে এ নদীর জল বণ্টন ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি কুশিয়ারা, ফেনী, মুন, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার নদ নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে নদীতীর ব্যবস্থাপনা, বন্যার আগাম তথ্য-সহ নদী সংক্রান্ত সব বিষয়েই আলোচনা হবে।
বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলির পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে দুই দেশের সহযোগিতার প্রসঙ্গগুলো আসতে পারে। নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের একে অন্যকে প্রয়োজন। রোহিঙ্গা (Rohingya) সংকট বাড়লে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি বাংলাদেশ তুলবে। এর বাইরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করবে। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক কালে মার্কিন-চিন বলয়ের প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠতে পারে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বাণিজ্য, জ্বালানি, পানিবণ্টন সংযুক্তি ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়গুলি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারত ‘সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা)’ সইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ জন্য দু’দেশ চুক্তি শুরুর বিষয়ে আলোচনা করতে চায়। ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা, পাট রপ্তানির ওপর ভারতের আরোপিত ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্ক অপসারণের প্রসঙ্গগুলো তুলবে ঢাকা, এমনটা আভাস দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রক। বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত ডিজেল রপ্তানি করতে চায় ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরে অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারের শীর্ষ বৈঠকেও তিস্তার বিষয়টি বাংলাদেশ তুলবে। এর পাশাপাশি ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমারের জলবণ্টনের রূপরেখা নিয়ে সমঝোতার বিষয়টি তুলবে বাংলাদেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.