সুকুমার সরকার, ঢাকা: অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুবাতাস দেখা দিল। কেটে গেল গুমোট আবহাওয়া। অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরের শেষার্ধে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসবে শাসকদল আওয়ামি লিগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার আওয়ামি লিগ সভাপতির ঢাকার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিকে আকস্মিক ঘোষণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ আলোচনায় বসতে রাজি হওয়ার কথা জানানোর পর বৈঠক বসেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওবায়দুল কাদের সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করার পর তাৎক্ষনিক ঢাকার মতিঝিলে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের চেম্বারে এই বৈঠক শুরু হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ছিলেন জেএসডির আ স ম আবদুর রব ও আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরি, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও মোকাব্বির খান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও জাহেদুর রহমান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মহম্মদ মনসুর ও আ ব ম মোস্তফা আমিন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরিও এই বৈঠকে ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের উদ্যোগে বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর তারা ৭ দফা দাবি তোলে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন তাদের দাবিনামায় রয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয় আওয়ামি লিগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
[দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের জেল খালেদার, আরও বিপাকে বিএনপি]
আওয়ামি লিগ নেতারা এতদিন আলোচনার আহ্বান নাকচ করে এলেও সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি আছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ আমি আপনাদের ও পুরো জাতিকে সারপ্রাইজ দেব। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে একটি সুখবর জানাব। এ খবরে রাজনীতির মাঠে শান্তির বাতাস বইবে বলে মনে করি। তিনি বলেন, ‘আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরজা সবার জন্য সব সময় খোলা। পার্টির পক্ষ থেকে আমরা জানিয়ে দিচ্ছি এই সংলাপে আমরা সম্মত। খুব শীঘ্রই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এই সংলাপের স্থান ও সময় জানিয়ে দেওয়া হবে।’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ দফা কর্মসূচি ও ৭ দফা দাবি মেনে নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন দাবি মেনে নেওয়া হবে আর কোনটা মেনে নেওয়া হবে না আমরা এখন এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাই না, সংলাপে সব বিষয়ে আলোচনা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করিনি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কাউকে সংলাপে ডাকিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বক্ষণে কোনও চাপের মুখে এই সংলাপ হচ্ছে না এবং তার কোনো পূর্বশর্তও দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন একটি চিঠি দিয়েছেন। আজ মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী ও সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। অনির্ধারিত এ বৈঠকে আলোচনা শেষে সর্বসম্মতি সিদ্ধান্ত হয়েছে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ সংলাপে বসবে। কারণ, শেখ হাসিনার দরজা কারও জন্য বন্ধ থাকে না। গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামি লিগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সংলাপে বসার জন্য চিঠি দেন গণফোরাম সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.